বিশেষ সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ নিঃশব্দে একটি বছরে,কার্যতঃ বিনা বাধায় ২৭ হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহনের কাজটি সেরে ফেলল ইসিএল (ইস্টার্ণ কোল্ডফিল্ডস লিমিটেড) কর্তৃপক্ষ। জেলারই এক প্রান্তের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার এই অধিগ্রহনের পর প্রশ্নের মুখে পড়েছে দুর্গাপুর ইস্পাতের সম্প্রসারনের জন্য প্রস্তাবিত জমি উদ্ধারের পন্থার ব্যর্থতা। কানাঘুষো এমন কথাও উঠছে, ‘ইসিএল এবং ডিএসপির দুই ভিন্ন চিত্র কি প্রমান করল না – যে গ্রামের লোকের চাষের জমি বুঝিয়ে সুজিয়ে নেওয়া সোজা হলেও,সরকারী সংস্থা তার নিজের জমি শহুরে জবরদখলকারীদের কব্জা থেকে কেড়ে আনতে পারে না’। ১ জানুয়ারি,২০২৩ থেকে ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ অব্দি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলির কয়লা উত্তোলনের জন্য কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই ৯৬৯৫.৭২ একর জমি অধিগ্রহন করেছে। দেশের ১৯৫৭’র ‘কয়লা সমৃদ্ধ এলাকা অধিগ্রহন আইন’র ৯ (১) ধারা মোতাবেক এই অধিগ্রহনের পর ৪০৫২.০৪ একর জমি কোল ইন্ডিয়াকে হস্তান্তর করাও হয়ে গেছে ওই আইনেরই ১১(১) ধারা মোতাবেক। এরাজ্যে কোল ইন্ডিয়ার অধীন দুটি কয়লা খনন সংস্থা কাজ করে – ইস্টার্ণ কোলফিল্ডস(ইসিএল) এবং ভারত কোকিং কোল (বিসিসিএল)। কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক,প্রধানমন্ত্রীর ‘শক্তি উদ্যোগ’ দপ্তরকে দেওয়া পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, “ ইসিএলের খননের জন্য ২৬৯০১.০৮ হেক্টর এবং বিসিসিএলের অতিরিক্ত খননের জন্য ১৬৩৮১.০৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে এবং ওই অধিগৃহীত জমির যথাক্রমে ২৪৮০০.১০ হেক্টর ও ১৬৩৮১.০৯ হেক্টর জমি সংস্থাগুলিকে ইতিমধ্যেই হস্তান্তরও করা হয়ে গেছে”। ইতিমধ্যেই,২০২২-২৩ অর্থ বছরে কোল ইন্ডিয়া ৮৯৩.১৯ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করে ফেলেছে। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে যা ছিল ৭৭৮.২১ মিলিয়ন টন। সংস্থা সূত্রেই জানা গেছে,২০২৩’র ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির জন্য কোল ইন্ডিয়া মোট ৭৬৪.৫৭ মিলিয়ন টন কয়লা সরবরাহ করেছে,২০২১ এ যা ছিল ৭৩২.৮৮ মিলিয়ন টন। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ‘আত্ম নির্ভর ভারত’ প্রকল্পে ২০৩০’র মধ্যে আভ্যন্তরীন কোকিং কয়লার উৎপাদন ১৪০ মিলিয়ন টনে নিয়ে যাওয়ার একটি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে। আবার,কয়লা মন্ত্রক নতুন করে ৩৪টি কোল ব্লক নিলামের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। এই নিলামের প্রক্রিয়া ২০২০’র ১৮ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরেই নবরূপে শুরু হয়েছিল,যাতে ২০টি কোল ব্লক বেসরকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। “ এ পর্যন্ত দেশের ৯১টি খনি বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি বছরে মোট ২২০.৯০ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করছে। এই নিলামের দরুন কেন্দ্রের ঘরে মোট ৪৪১৩০ কোটি টাকা এসেছে,” বলে দাবি করলেন কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান প্রমোদ আগরওয়াল। ইসিএল পারলেও,নিজের জমি উদ্ধারে বারে বারে কেন ব্যর্থ ডিএসপি,এই প্রশ্নের জবাবে সেইলের জনসংযোগ আধিকারিক চিন্ময় সমাদ্দার বলেন, “দুটোর পরিস্থিতি আলাদা। ডিএসপির সমস্যাও দ্রুত মিটে যাবে বলে আমরা নিশ্চিত। ডিএসপির সম্প্রসারনের জন্য দুর্গাপুরের ওই জমি ভিষণ দরকারি”।
ডিএসপি ব্যর্থ হলেও,নিঃশব্দে ২৭ হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহন করল ইসিএল
RELATED ARTICLES