নিজস্ব সংবাদদাতা,বর্ধমান,৫ মেঃ নয়নয় করেও প্রায় ১৩ বছর পর বর্ধমান শহরে মমতার সেই জনমোহিনী শক্তিকে দেখল বর্ধমান। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দোপাধ্যায় একাধিকবার বর্ধমান শহরে পদযাত্রা করেছেন। কিন্তু ২০১১ সালের আগে বিরোধী দলের নেত্রী হিসাবে তাঁর জন্য মানুষের যে আবেগ আছড়ে পড়ত, সাম্প্রতিককালের তাঁর সেই রোড শোয়ে কোথাও একটি খামতি থাকলেও চলতি লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কীর্তি আজাদের সমর্থনে রবিবার বিকালে মমতা যে রোড শো করলেন তাতে আপামর মানুষকে সেই পুরনো মমতাকেই চিনিয়ে দিয়েছে। এই সময়কালের মধ্যে তাঁর বয়স বেড়েছে, রয়েছে একাধিকবার শরীরে চোটের সমস্যা। তবুও মমতা সেই মমতা রূপেই রবিবার দেখিয়ে দিলেন এখনও তাঁর সেই জনমোহিনী শক্তিকে। রবিবার বিকালে প্রায় পৌনে পাঁচটা নাগাদ বর্ধমান শহরের স্পন্দন কমপ্লেক্সে হেলিপ্যাডে নেমে মমতা বন্দোপাধ্যায় শুরু করেন পদযাত্রা। তাঁর সফর সঙ্গী মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সহ উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, খোকন দাস, বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ প্রমুখরাও। এদিন দুপুর থেকেই চারিদিক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা হাজির হন ষ্টেশন এলাকায়। দুপুর ৩টের মধ্যেই বর্ধমান শহরের লাইফ লাইন জিটিরোড কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যদিও এদিন দুপুর থেকেই এই জিটিরোডের সংযুক্ত সমস্ত রাস্তায় ব্যারিকেড করে দেয় পুলিশ। মমতা বন্দোপাধ্যায় যখন পদযাত্রা শুরু করলেন তখন বর্ধমান ষ্টেশনের ফ্লাইওভার থেকে জিটিরোডে শুধু মাথা আর মাথার সারি।
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পিছনেই রাখা হয়েছিল আদিবাসী মহিলাদের মাথায় কলসী নিয়ে সুসজ্জিত করে। তাঁরা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে পুলিশ লাইন পর্যন্ত হাঁটলেন। একইসঙ্গে কাতারে কাতারে তৃণমূল সমর্থক এদিন কখনও হাঁটলেন, কখনও ছুটলেন মমতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। যদিও এদিন নীলপুর মোড় পাড় হবার পরই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের গতি শ্লথ হয়ে পড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গাড়িকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তিনি গাড়িতে না চড়েই হাঁটতে শুরু করেন। বর্ধমান স্পন্দন কমপ্লেক্স থেকে বেড়িয়েই গুরুদুয়ারার সামনে অপেক্ষমান শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁকে বরণ করেন। কার্জন গেটের সামনে রাস্তার দুধারে থাকা মানুষকে এমনকি বাড়ির ওপরে থাকা মানুষদের তিনি নমস্কার করেন। বর্ণাঢ্য মিছিল কালীবাজার মোড়ে পৌঁছাতেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত এবং তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী শিখা সেনগুপ্তকে দেখে মমতা এগিয়ে যান তাঁদের দিকে। এরপর ফের রওনা দেন মমতা। পুলিশ লাইনের কাছাকাছি আসার পর মমতা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন সময় নেই কথা বলার। এরই মাঝে জিটিরোডে ছিন্নমস্তা কালীমন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রণাম করেন তিনি। পুলিশ লাইনে গাড়িতে ওঠার সময় কীর্তি আজাদের বিহার এলাকার কয়েকজনকে দেখে মমতা বলেন, আপনারা কীর্তি আজাদের পরিবার। হিন্দি ভাষাভাষী এলাকায় ভাল ফল করতে হবে। কীর্তি আজাদ ভাল প্রার্থী, তিনবার সাংসদ ছিলেন। প্রতুত্তরে এক যুবক জানান, কীর্তি আজাদ খুব ভাল প্রার্থী। তাঁরা খুশী। পুলিশ লাইন থেকে এরপর তিনি হেলিকপ্টারে উড়ে যান দুর্গাপুরের দিকে।