Friday, November 22, 2024
Google search engine
Homeদক্ষিণবঙ্গকেন ইন্ডিয়া জোট ২০২৪ সালে জিততে চলেছে?

কেন ইন্ডিয়া জোট ২০২৪ সালে জিততে চলেছে?

সৌরভ কুন্ডু: এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিগত পাঁচটি দফায় কংগ্রেস ও তার জোট শরিকদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও অন্যান্যবারের তুলনায় কম ভোটের হার এবং সম্পূর্ণভাবে বিজেপি-নির্ভর এনডিএ হল এবারে ইন্ডিয়া জোটের সরকার গড়ার প্রধান কারণ। যুক্তি – এনডিএ’র বাকি শরিকদের কি আদৌ কোন উল্লেখ বা রাজনৈতিক গুরুত্ব দেশে এখন আছে? নিম্নলিখিত কয়েকটি কারণে মনে হচ্ছে ইন্ডিয়া জোটেরই দিল্লিতে এবারে সরকার গঠনের সম্ভাবনা প্রবলঃ
১) লক্ষ্য করে দেখে থাকবেন, গত দশটি সাধারণ নির্বাচনে, বিজেপি এবং কংগ্রেস মিলিয়ে গড়ে প্রায় ৩১০টি আসন জিতেছে (শুধু ১৯৮৪ এবং ২০১৯ সাল বাদে, কারণ এই দুই নির্বাচন ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যতিক্রমী)।
২) নির্বাচনে বিজেপি যদি ভালো ফল করে, তাহলে কংগ্রেসের প্রভূত ক্ষতি হয়। আবার উল্টোটাও সত্যি, যদি কংগ্রেস ভালো ফল করে, তাহলে বিজেপির অবনতি ঘটে ( এটি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শতাব্দী প্রাচীন দলটির প্রতি সীমাহীন আসক্তি(!)র কারণে সম্ভবত)। সরলীকরণ করলে: যদি কংগ্রেস ৭০টি আসন জেতে, তাহলে বিজেপি ২৪০টি পেতে পারে। যদি কংগ্রেস ৯০-১০০টি পায়, তাহলে বিজেপি ২১০-২২০টি পর্যন্তও নেমে যেতে পারে।
৩) তাহলে কেন ২০২৪ সালে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে বা কেন মনে হচ্ছে সরকার গঠন করতে পারে!! সোজা হিসেব, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হিট-রেট ছিল মাত্র ৮%। তাই এবারের নির্বাচনে এই হিট রেটের সামান্যতম উন্নতিও তাদের আসন সংখ্যা উপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার বেশি সুযোগ দেবে, অথচ এটাই আবার বিজেপির জন্য গুরুতর ক্ষতি সাধন করবে। তাই, কংগ্রেসের ফল এমন কিছু অসাধারণ ভালো হতে হবে না এই বিজেপিকে থামাতে।
৪) এবার খুব কৃপণ একটা হিসেব, যাতে দেখা যায় কংগ্রেস বিজেপির কাছ থেকে অন্তত ৫৩টি লোকসভা আসন ছিনিয়ে নিতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে কর্নাটক (১০টি), মহারাষ্ট্র (৫টি), গুজরাট (১টি), হরিয়ানা (৪টি), রাজস্থান (৭টি), ছত্তিসগঢ় (৪টি), মধ্যপ্রদেশ (৩টি), উত্তর প্রদেশ (৪টি) দিল্লি (১টি), অসম (২টি), উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি মিলিয়ে (৫টি), বিহার (২টি), ঝাড়খণ্ড (২টি), উত্তরাখণ্ড (১টি), এবং হিমাচল প্রদেশ (২টি) – মিলিয়ে মোট ৫৩টি লোকসভা আসন। তবে, মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকের সংখ্যা কিন্তু আরও বেশিও হতে পারে, কিন্তু এক্ষেত্রে নিম্নস্হ সূচক নিয়েই কাজ করায় স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। অর্থাৎ, উপরে লিখিত আসনগুলি কংগ্রেস যদি ঐ রাজ্যগুলি থেকে জিততে পারে, তবে, একাই বিজেপিকে ২৫০ আসন পর্যন্ত নামিয়ে আনতে পারে (৩০৩ বিয়োগ ৫৩)। আর, সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে বলা যায়, তেলাঙ্গানায় কংগ্রেস দ্বি-অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছাতেই পারে, বিআরএসের কাছ থেকে আসন ছিনিয়ে নিয়ে।
৫) এবার ইন্ডিয়া জোটের বাকি দলগুলির অবস্থান? শিবসেনা (ইউবিটি), এনসিপি (শরদ পাওয়ার), আরজেডি, আপ, এসপি, জেএমএম (তৃণমুল কংগ্রেসের কথা পরে) ইত্যাদি দলগুলি সম্ভবত বিজেপির আসন সংখ্যা আরও অন্তত ৩০টি কমিয়ে দেবেই (খুবই নিম্ন সূচকের), যা বিজেপিকে ২২০ টি আসনে নামিয়ে আনবেই (২৫৩-৩০=২২৩) গাণিতিক নিয়মে।
৬) কিন্তু, বিজেপির আসন বাড়তে পারে কোথায়? সম্ভবত: ওড়িশা, তেলাঙ্গানা, এবং কিছুটা অন্ধ্রপ্রদেশে। কিন্তু, সেক্ষেত্রে তাদের হয়ত মাত্র ১০টি আসন যোগ হতে পারে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে যদি টিএমসি একপ্রকার ধ্বংস হয় ( যার সম্ভাবনা নিতান্তই কম দেখা যাচ্ছে) তবেই কিন্তু বিজেপির আসন বাড়বে, নতুবা বিজেপি একক ভাবে ২৩০টি আসনে পৌঁছাবেই না।
৭) প্রসঙ্গত: ২০২৪ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে ওঠে একটি সমীকরণ তা’ হল বিজেপি = এনডিএ। অথচ, এনডিএ- তে ৩৮টি সহযোগী বা শরিক দল আছে, যারা নিজেদের রাজ্যেও সংখ্যাগরিষ্ঠতো নয়ই, ক্ষেত্রবিশেষে প্রাসঙ্গিকও নয়, টিডিপি বাদে। জেডিইউ, এলজেপি, জেডিএস, এসএস (শিন্দে), এবং এনসিপি (অজিত পাওয়ার) এরা হল একদম নিষ্ক্রিয় যোগদানকারী, যাদের যোগদানও অতি নগণ্য। যদি বিজেপি আশ্চর্যজনকভাবে এদের সকলকে নিয়ে ২৫০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেও, তবুও এনডিএর কাছে প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা (২৭২ টি) থাকবে না, যা কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে আবশ্যিক ভাবে লাগবেই।
এই বিশ্লেষণ মিলে গেলে যেমন আলাদা করে কোনো মেডেল মিলবেনা, আবার কারণবশতঃ না মিললেও হারানোর কিছু নেই, কারণ মগজের তো আর বিরাম নেই। খোঁজ চলবে, ঠিক কি কি কারণেই বা সম্ভাব্য ফল ওলটপালট হয়ে গেলো – বাঙালীর প্রিয় এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে নিরন্তর।
(লেখক: রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কর্মরত একজন অবৈতনিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। মতামত লেখকের নিজস্ব)

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments