সংবাদদাতা,বোলপুর,২৬ জুনঃ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মনোভাবে মাফিয়াদের হাত থেকে জমি ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন বীরভূমের খঞ্জনপুর মৌজার বাসিন্দারা। তাদের বিশ্বাস পাট্টা পাওয়া জমি ফিরিয়ে দেবে প্রশাসন। চাষাবাদ করে পরিবার নিয়ে ফের স্বাচ্ছল্য জীবনযাপন করবেন তারা। জানা গিয়েছে, পাঁড়ুই থানার সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের খঞ্জনপুর মৌজায় বেশ কিছু পরিবারকে জমি পাট্টা দিয়েছিল সরকার। কিছু দিন পর ওই এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে একটি আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রায় ৫২ বিঘা জমির আবাসন নির্মাণ করতে গিয়ে আদিবাসীদের কাছ থেকে ২২ বিঘা পাট্টা ও বর্গা পাওয়া জমি জোর করে লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ এই মর্মে বোলপুর মহকুমা শাসক থেকে শুরু করে বোলপুর ও জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং প্রশাসনের সর্বস্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন জমিহারারা ৷ জমিহারাদের অভিযোগ, বেসরকারি আবাসন তৈরির জন্য জমি মাফিয়ারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে যায়। কোন কোন পরিবারকে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে জমি লিখিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ৷ টাকার বিনিময়ে জমি দিতে না চাইলে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে বিলাসবহুল আবাসনের পিছনে মাটি ও তালপাতার ঘরে বসবাস করছেন জমিহারা কৃষক পরিবারগুলি৷ যদিও, আবাসনের অন্যতম কর্ণধার সুবর্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনেই জমি কিনেছি। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া নথির ভিত্তিতেই জমি কেনা হয়েছে। জোর করে দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন ৷”
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে জমি দখলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি জমি উদ্ধার করে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তাদের। সারা রাজ্যের সঙ্গে শান্তিনিকেতনেও জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে নতুন কিছু নয়। শাসকদল তৃণমূলের মদতে পাট্টা পাওয়া ভূমিহারাদের জমি কেড়ে নিয়ে গড়া হয়েছে বিলাসবহুল আবাসন কিংবা প্রমোদ গ্রাম। কলকাতার কংক্রিটের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে সবুজের সমারোহে দুদিন কাটাতে অনেকে আসেন শান্তিনিকেতনে। সেই কারণেই শান্তিনিকেতন এলাকায় গড়ে উঠছে গ্রাম্য পরিবেষের আবাসন। আর এই বিলাসবহুল আবাসন গড়তে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে দুঃস্থদের জমি। এমনকি পাট্টা পাওয়া জমি মালিকদের হুমকি দেওয়া হয়েছে জমি নিবি, না ছেলের মাথা নিবি? প্রানের মায়ায় আদিবাসী পরিবারগুলি জমি ছেড়ে দিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। জমিহারাদের মধ্যে পার্বতী রায়, আরতি রায়, গৌড় রায়, হারাধন হাঁসদা বলেন, “বাড়িতে দিনরাত লোক এসে বলছে, জমি দিবি নাকি ছেলের মাথা নিবি। ছেলের মাথা কি সস্তা? ভয়ে পাট্টা পাওয়া জমি ওদের লিখে দিতে হয়েছে। কেউ টাকা পেয়েছে, কেউ পায়নি ৷ ভয়ে তখন অভিযোগ করতেও পারেনি৷ কার কাছে যাব, কাকে বলব, কিছুই বুঝতে পারিনি ৷ আমরা কেউ জমি বিক্রি করিনি৷ জমি কেড়ে নিয়েছে। একসময় প্রচুর ধান উঠত এই জমি থেকে। আমরা চাষবাস করে খেতাম৷ জম কেড়ে নেওয়ায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী জ্জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসনকে। আমরা চাই আমাদের জমি ফিরিয়ে দিক। ফের সবুজ ফলিয়ে দুমুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচি।” বোলপুর মহকুমা শাসক অয়ন নাথ বলেন, “আমি অভিযোগ পেয়েছি। অনেককেই প্রাপ্য মূল্য দেওয়া হয়নি বলে খবর আছে ৷ আমি তাদের বলেছি কেস পুট-আপ করতে৷ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ফের জমি ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বোলপুরের জমিহারা পরিবারগুলি
RELATED ARTICLES