নিজস্ব প্রতিনিধি,দুর্গাপুরঃ এটিএম কার্ড দিয়ে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অনেক ঘটনা ঘটেছে। এবার সেই ঘটনা ছাপিয়ে অন্য এক কৌশলে এক গ্রাহকের দেড় লক্ষ টাকা তুলে নেওয়ার এক অভিনব ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দুর্গাপুরে। ব্যাংকের হেফাজতে থাকা চেক বই হাতিয়ে কিভাবে এই ঘটনা ঘটল তা নিয়ে সর্বস্তরেই উঠছে প্রশ্ন। এই কাজ কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাং করেছে বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রতারিত গ্রাহক পুরো বিষয়টি দুর্গাপুরের সাইবার ক্রাইম শাখায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে সিটি সেন্টারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে স্বাগতা তিওয়ারী মুখার্জী নামে এক গৃহবধুর সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় লাখ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্বাগতাদেবী জানান, তিনি একজন গৃহবধূ এবং তার কোন এটিএম কার্ড নেই। গত সপ্তাহে চেক বই শেষ হয়ে গেলে তিনি একটি চেক বইয়ের জন্য ব্যাংকে আবেদন করেন। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা তার নামে তার ঠিকানায় একটি নতুন চেকবুক পোস্ট অফিস মারফত পাঠায়। কিন্তু স্বাগতাদেবী বাড়িতে না থাকায় চেক বুকটি সিটি সেন্টারে ওই ব্যাংকে ফেরত আসে। ব্যাংক থেকে ১২ আগস্ট তাকে চেক বইটি নিয়ে যাবার জন্য ফোন করা হয়। স্বাগতাদেবী তখন ব্যাঙ্ক কে জানায় তিনি সোমবার অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ব্যাংকে গিয়ে চেকবুকটি সংগ্রহ করে নেবেন। কিন্তু, বৃষ্টির জন্য সোমবারও তিনি ব্যাংকে যেতে পারেননি। পরের দিন ২০ আগস্ট মঙ্গলবার তিনি যখন ব্যাংকে যাবার জন্য বের হচ্ছেন ঠিক সেই সময় তার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় লাখ টাকা তোলা হয়েছে। এরপর তিনি দ্রুত সিটি সেন্টারে ওই ব্রাঞ্চে গিয়ে হাজির হন। বিষয়টি ব্যাঙ্ককর্মীদের জানান তিনি। সেখানে তাকে দেখানো হয় স্বাগতা নাকি কমলেশ মারান্ডি নামে একজনকে চিঠি দিয়ে তার ব্রাঞ্চ থেকে চেক বই তুলে নিতে অথরাইজ করেছেন। অবাক হয়ে স্বাগতা জানান, তিনি কাউকে চেক বই নিতে অথরাইজ করেননি এবং কমলেশ কে আদৌ তিনি চেনেন না। একথা তিনি জোর দিয়ে বলতে থাকলে ব্যাংক স্টাফেরা তার উপর রেগে গিয়ে তাকে সহযোগিতার বদলে অপমান করে বলেন, আপনিই ওই লোকটিকে অথরাইজ করে চেক বই নিতে পাঠিয়েছিলেন। এরপরে ম্যানেজারের নির্দেশে স্বাগতাকে অথরাইজেশন এর চিঠি দেখানো হলে স্বাগতা বিস্মিত হয়ে বলেন, এর সবটাই মিথ্যে এবং আরও বলেন, এই স্বাক্ষরটা অনেকটা তার স্বাক্ষরের মত করে নকল করা হয়েছে। কিন্তু এ তার স্বাক্ষর নয়। ম্যানেজার তাকে নাকি বলেন, রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ৮০ শতাংশ স্বাক্ষর মিললে টাকা দিয়ে দিতে হবে তাই তারা ওই চিঠির ভরসায় চেক বই অন্যজনকে দিয়েছেন। স্বাগতা বলেন, তার চেক বই ব্যাংকের হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও কি করে সেই ব্যক্তি তার সেই চেকবই সংগ্রহ করে সেখান থেকে চেক নিয়ে তার সই নকল করে দেড় লাখ টাকা তুলে নিল। আর কি ভাবেই বা তার স্বাক্ষর নকল করলো। এই কথা বলাতে ব্যাংকের একজন হিন্দিভাষী মহিলা কর্মী তাকে অপমান করে বলেন, এই মিথ্যে কথা বলার জন্য তার জেল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। স্বাগতা বুঝে যান তিনি জালিয়াতি শিকার হয়েছেন। যে জালিয়াতি করেছে জামতারা গ্যাং এর এজেন্ট। এটি একটি বড় ষড়যন্ত্র বুঝে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এর ম্যানেজার প্রকাশ সাহু ভুক্তভোগী ওই মহিলার লুট হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারপরই স্বাগতা পুলিশে অভিযোগ করেন। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। চেক বই ব্যবহার করে টাকা লুটের নজির বিহীন ঘটনা সবাইকে অবাক করেছে। সেই সঙ্গে গ্রাহকদের মধ্যে চরম উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। এতো বড় একটি জালিয়াতির ঘটনা ব্যাঙ্কের ভিতর কিভাবে ঘটল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
ব্যাংকের হেফাজতে থাকা চেকে গ্রাহকের দেড় লাখ টাকা লুঠের ঘটনায় চাঞ্চল্য দুর্গাপুরে
RELATED ARTICLES