নিজস্ব প্রতিনিধি,বাঁকুড়াঃ গত কয়েক দিনের চড়া রোদ গুমোট গরম আজ নেই। আজ মনোরম পরিবেশে বাঁকুড়ার রাইপুরের সবুজ সংঘের মাঠে সব বিরোধীদের এক হাত নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর সমর্থনে দুর্গাপুর থেকে ঠিক ১২:১৫ এ হেলিকপ্টারে এসে পৌঁছায় রায়পুরের সবুজ সংঘের মাঠে অস্থায়ী হেলিপ্যাডে। তখন অস্থায়ী হেলিপ্যাড সহ র সভাস্থলে গিজগিজ করছে মানুষের ভিড়। হেলিপ্যাডেই একপ্রস্থ প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে মানুষের মধ্যে জনসংযোগ সারেন মুখ্যমন্ত্রী। রাইপুরের আদিবাসী মহিলারা তাকে বরণ করে নেয় তাদের সমাজের চিরাচরিত সংস্কৃতি সাঁওতালি আটপৌরে শাড়ি দিয়ে। এরপর মঞ্চে উপস্থিত হয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে আক্রমণ শানান বিরোধীদের, এর পাশাপাশি জলপাইগুড়িতে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে চেয়েও না থাকতে পেরে দুষতে দেখা যায় নির্বাচন কমিশনকেও। জলপাইগুড়িতে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি তিনটে কথা বলছি সাবধান হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী গতকাল জলপাইগুড়িতে মিটিং করতে গিয়েছিল। আমার তাতে কোন আপত্তি নেই। আপনাকে স্বাগত, আপনি বাংলার প্রতিটা ব্লকে ব্লকে সভা করুন এটা আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আপনি মিটিং করে জলপাইগুড়ির মানুষকে কোন সাহায্যের কথা বললেন না। যাদের ঘর গুলো পড়ে গেছে, যাদের বাচ্চারা মরে গেছে, যারা আজও রাস্তায় পড়ে আছে। আমি মধ্যরাতে ছুটে গিয়েছিলাম জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার কোচবিহার সবাইকে আমরা রিলিফ দিয়েছি। আর বাংলার বাড়ি প্রকল্পে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা করে দেবে বলে সরকার প্রশাসন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে তাও ৭ দিন আগে। এটা সেন্ট্রালের টাকা নয় আমরা দেবো টাকা তাও পারমিশন পাচ্ছি না। ইলেকশন না থাকলে আমি এক সেকেন্ডে করে দিতাম ইলেকশন বলে আমাকে পারমিশন নিতে হচ্ছে” বলেও হতাশা প্রকাশ করেন। এরপর তার আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাকে মোদিবাবু সম্বোধন করে তিনি বলেন,” মোদিবাবু কি বলে গেলেন।প্রধানমন্ত্রী মোদীজি আপনাকে আমি সম্মান করেই বলছি। আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, দীর্ঘ জীবন লাভ করুন। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই ধরনের ভাষা কি শোভা পায়? চৌঠা জুন নির্বাচন হয়ে গেলে চুন চুন কে অ্যারেস্ট করেগা। অভি তো হিন্দুস্থান কো জেল বানা দিয়া। জেল তো আপ পেহলেই বানা দিয়ে। আপকা এল পকেটে এন আই এ, ওর এক পকেট মে সি বি আই, এক পকেটে মে ইডি,তো এক মে ইনকাম ট্যাক্স, এন আই এ আর সি বি আই বিজেপি কা ভাই ভাই। ইডি আর ইনকাম ট্যাক্স বিজিপি কা ফান্ড বক্স। এহি তো চল রাহা হে, ওর ইসকে বাদ ভি আপ ধমকি দে রহে হে। কিসকো ধমকি দে রহে হে! হাম লোগ আপসে ডরতে নেহি। হাম লোগ কা পাঁচ লাড়কা অ্যারেস্ট হোগা, তো উনাকা বিবি রাস্তে নিকলে গা। হামারি এজেন্ট কো অ্যারেস্ট কর রহে হে। আগার আপকা হিম্মত হে জনতা কা ভোট লেকার জিতনে কে লিয়ে, তো কিউ অ্যারেস্ট কার রাহা হে। কিউ আপ হেমন্ত কো অ্যারেস্ট কিয়া ট্রাইবেল লিডার।দেশ কা এক হি ট্রাইবেল লিডার থা চিপ মিনিস্টার। দিল্লি কা মুখ্যমন্ত্রী কো অ্যারেস্ট কেয়া হুয়া হে, উসকো কই ফারাক নেহি পড়তা, উলোগ ভি জাদা ভোটো সে জিতেগা।আপনাকে ভয় করি না। আপনার হুঙ্কার আপনার দলের লোককে জানান চাঙ্গা করুন৷ আমরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। দুর্নীতি প্রমান করুন। নিজেরা সামলাতে পারে না। এখানে কংগ্রস আর সিপিএম কে ভোট দিয়ে ভোটটা নষ্ট করবেন না। এরা বিজেপির সাথে যুক্ত। ভোটটা দিন জোড়াফুলে।আপনার হুঙ্কার আপনার দলের কাছে অক্সিজেন। গণতন্ত্রের কাছে কার্বন ডাই অক্সাইড। আমার মুখ বন্ধ থাকবে না। মোদির গ্যারান্টী সবাই কে জেলে পাঠাবো। আর আমাদের গ্যারিন্টি মা মাটি মানুষ। মানুষের জন্য কাজ। আগে বাঁকুড়া ছিল অশান্তির জায়গা। জঙ্গলমহল ছিল সন্ত্রাসের জায়গা। মানুষ বেরোতে পারত না। আর রাইপুর দিয়ে সাঁকরাইল দিয়ে গুন্ডারা বেরিয়ে যেত। তাদের হাতে খুনের রক্ত ছিল। আমরা কিন্তু জঙ্গলমহলকে শান্ত করে দিয়েছি। এটা আপনাদের অবদান। মা মাটি মানুষের অবদান। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর দুটো সিট পেয়েছিল বিজেপি গত লোকসভায়। কিন্তু কিছু করেছে, বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের এমপি কিছু করেছে।কবার এসেছেন রাইপুরে,কবার এসেছেন তালডাংরায়, কবার বাঁকুড়ায় এসেছেন। এরা নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, মানুষের কাজ নিয়ে ব্যস্ত নয়। আর একজন বিষ্ণুপুরের, নাই বা বললাম। জানি না ডিভোর্স হয়েছে কিনা, তার স্ত্রী দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে। তার যদি ফটো গুলো আমি খুলি তাহলে বিষ্ণুপুরের মানুষ বুঝতে পারবেন বিজেপি কত আদর্শবান দল। যারা মিথ্যে কথা বলে বেড়ায়, সব ছবি আমার কাছে আছে।”
বাঁকুড়ার সভায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে টার্গেট করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো
RELATED ARTICLES