বিশেষ সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ ‘কৃষক-বন্ধু’র পর কি রাজ্যের ও কৃষিজীবিদের জন্য এবার ‘কৃষকসাথী’? রাজ্যের কৃষি দপ্তর থেকে ইঙ্গিত মিলেছে সেরকমই।রাজ্যের কৃষিজীবিদের স্বাভাবিক মৃত্যুর দরুণ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০১৯’র ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৫ অগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ৪ বছরে রাজ্য সরকার ১৮৬১ কোটি টাকা মৃত কৃষকের পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটি রাজ্যের ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের অন্তর্গত। এতে রাজ্যের ৯৩ হাজার ৬৩টি পরিবার এই সহায়তা পেয়েছে। রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বললেন, “কৃষক ভাল না থাকলে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা কমে যাবে। তাই,কৃষকের স্বাস্থ্য বা কৃষকের পরিবারের নিরাপত্তা যদি না থাকে, বা তাকে সারাদিনই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় এই নিয়েই, তার নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে চাষবাসে”। মন্ত্রীর বক্তব্য, “এসব চিন্তা করেই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী গোড়া থেকেই কৃষি,কৃষক ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের কি কি ভাবে উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে লাগাতার চেষ্টায় থাকেন। যার ফসল কৃষকবন্ধু বা বাংলা শস্য বীমা যোজনা”। কৃষকবন্ধু প্রকল্পেরই একটা অংশ হল ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত রাজ্যের যে কোনও কৃষকের মৃত্যু হলে,তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ২ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেয় কৃষি দপ্তর। “এর জন্য কোনো ঝঞ্ঝাট মৃত কৃষকের পরিবারকে পোহাতে হয় না। শুধুমাত্র মৃত চাষীর ডেথ সার্টিফিকেট স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পুরসভা মারফৎ জমা করলেই টাকা চলে যায়। বছরে গড়ে ৩০ হাজার চাষী পরিবারকে দিতে ৬০০ কোটি টাকা এ বাবদ আমাদের খরচ হয়”, বলে জানালেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এ বছরের শুধুমাত্র আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্তই ২৫৩৬টি চাষী পরিবার এ বাবদ ৫০.৭২ কোটি টাকা পেয়ে গেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কোনও কারণে চাষীর মৃত্যু হলে তার পরিবার না হয়,২ লক্ষ টাকা এককালীন সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু, ৬০ বছরের পরও জীবিত কৃষকের জন্য কি কোনো আর্থিক সহায়তা নেই এ রাজ্যে? কৃষি মন্ত্রী বললেন, “রাজ্যের প্রতিটি নথিভুক্ত কৃষক ৬০ বছর বয়সের পর মাসে ১০০০ টাকা করে পেনশন পেয়ে থাকেন। এত সব ব্যবস্থা পশ্চিমবাংলার বাইরে আর কোন রাজ্য কৃষকদের জন্য করেছে? এখন বহু রাজ্য আমাদেরকে মডেল হিসেবে ধরে তাদের নিজেদের চাষীদের জন্য এসব সুবিধা আনতে চাইছে। এটা ভাল লক্ষণ”।পশ্চিম বাংলায় কৃষির সার্বিক উন্নতিকে স্বীকৃতি দিয়ে দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ২০২১’র বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ করে, “দেশের কৃষিতে উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কৃষিতে আয়। দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই কৃষিতে আয় বেড়েছে তিনগুন”। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব্ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (আই. সি. এ. আর) এ রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থা প্রসঙ্গে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছে, “বাংলার ৯৬ শতাংশ কৃষিজীবিই প্রান্তিক চাষী, যাদের হাতে মাথাপিছু গড়ে কেবলমাত্র ০৭৭ হেক্টর করে চাষযোগ্য জমি রয়েছে। এতত সত্ত্বেও তার উৎপাদনশীলতার দরুণ পশ্চিমবঙ্গই দেশের সর্বাধিক ধান উৎপাদক হিসেবে রাজত্ব করছে বছরের পর বছর ধরে”। রাজ্যের মোট জমির ৬২ শতাংশ চাষযোগ্য, যার মোট পরিমাণ ৫.৫ মিলিয়ন হেক্টর। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ সেচসেবিত। প্রান্তিক চাষীদের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে রাজ্য সরকার জোর দিয়েছে। কৃষি মন্ত্রীর দাবি,“এই জন্যই রাজ্যের মোট কৃষিজীবি পরিবারের সংখ্যা ৭৭.২৩ লক্ষ থেকে থেকে বেড়ে ৯৮ লক্ষ হয়েছে। আর এদের ৯৬ শতাংশই হলেন প্রান্তিক চাষী”। কৃষির মানোন্নয়ন,কৃষকবন্ধু প্রকল্পে কৃষক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান তো হল,কিন্তু কৃষকের জন্য আলাদা করে স্বাস্থ্য বীমার কথাই এখন ভাবছে রাজ্য সরকার। “অনেকটা স্বাস্থ্যসাথীর মতো হলেও,এর মধ্যে জটিল ব্যাধির চিকিৎসার জন্য আমরা আলাদা কিছু প্রস্তাব আনার কথাও ভাবছি,যাতে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে সহজেই রাজ্যের কৃষিজীবিরা চিকিৎসার সুবিধা পেতে পারেন”,বলে জানালেন কৃষি দাত্তরের সচীব পর্যায়ের এক পদস্থ আধিকারিক। তবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নামও ‘কৃষকসাথী’ হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। কারণ, অশোক গেহলতের রাজস্থান সরকার ওই নামেই একটি সার,বীজ প্রদান প্রকল্প চালু করেছে। “মুখ্যমন্ত্রী বাংলার কৃষকদের জন্য সর্বদাই চিন্তিত। মৃত্যু পরবর্তী পারিবারিক অর্থ সাহায্যের বহরেও বোঝা যায়। আগামীতে আরো প্রকল্প”, বললেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার।
কৃষক মৃত্যুতে ১৮৬১ কোটি দিল রাজ্য,এবার কি কৃষকসাথী বীমা?
‘কৃষক-বন্ধু’র পর কি রাজ্যের ও কৃষিজীবিদের জন্য এবার ‘কৃষকসাথী’? রাজ্যের কৃষি দপ্তর থেকে ইঙ্গিত মিলেছে সেরকমই।
RELATED ARTICLES