রিঙ্কু ভট্টাচার্য, বর্ধমান: রংবাহারি টি-শার্ট আর স্টিকার হাতিয়ার করে গণনা কেন্দ্রে বাইরের লোক ঢোকা রুখতে এবার দারুনই সিরিয়াস বর্ধমান প্রশাসন। এক্সিট পোলের মত প্রকাশের আগেই প্রশাসনের এই রংমিলান্তি। গণনা কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত সরকারী কর্মী, তথা রাজনৈতিক এজেণ্ট থেকে বাইরের লোকরা যাতে নিজের কেন্দ্র ছেড়ে অন্য কেন্দ্রে ঢুকে পড়তে না পারেন তার জন্য নজিরবিহীন এই সিদ্ধান্ত নিল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট গণনা কেন্দ্রে এই ধরণের একাধিক অভিযোগ আসায় কিভাবে এর মোকাবিলা করা সম্ভব তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে জেলা প্রশাসন। জানা গেছে, এরপরই জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু প্রতিটি লোকসভার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৭টি করে বিধানসভা। তাই প্রতিটি বিধানসভার জন্য তাঁরা আলাদা আলাদা রং চালু করবেন। এর ফলে একটি বিধানসভার ভোট গণনার সঙ্গে যুক্ত কর্মী থেকে রাজনৈতিক এজেণ্টরা অন্য বিধানসভায় ঢুকলেই তাঁরা জানতে পারবেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভার অধীন বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার জন্য তাঁরা নির্দিষ্ট করেছেন হালকা সবুজ স্টিকার দেওয়া সচিত্র পরিচয়পত্র। মন্তেশ্বরের জন্য বেগুনি, বর্ধমান উত্তরের জন্যে মেরুন, ভাতারের জন্যে গোলাপী, গলসির জন্যে হলুদ, দুর্গাপুর পূর্বের জন্য নীল এবং দুর্গাপুর পশ্চিমের জন্যে ধূসর রঙের স্টিকার দেওয়া কার্ড দিচ্ছেন। অন্যদিকে, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের রায়না বিধানসভার জন্য হালকা সবুজ, জামালপুরের জন্য বেগুনি, কালনার জন্য মেরুন, মেমারীর জন্য গোলাপী, পূর্বস্থলী দক্ষিণের জন্য হলুদ, পূর্বস্থলী উত্তরের জন্য নীল এবং কাটোয়ার জন্য ধূসর রংয়ের স্টিকার দেওয়া সচিত্র পরিচয় পত্র দিচ্ছেন। এদিন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতিটি বিধানসভার জন্য ২৫জন করে ভোট কর্মী থাকছে যাঁরা স্ট্রংরুম থেকে ইভিএম, ভিভি প্যাট মেশিন আনা নেওয়া করবেন। তাঁদের জন্যই বিধানসভা ভিত্তিক আলাদা আলাদা রঙের গেঞ্জির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিটি বিধানসভার জন্য বিভিন্ন রংয়ের স্টিকার দেওয়া প্রায় ২২০টি করে সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। শনিবার জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার এই অভিনব চিন্তাভাবনার সঙ্গে যুক্ত এই জেলায় কোনো অস্থায়ী কর্মীকে ভোট গণনার কাজে লাগানো হচ্ছে না। অন্যান্য জেলাতে কিছু কিছু অস্থায়ী ভোটকর্মীকে কাজে লাগাতে হলেও এই জেলায় একেবারে সরকারী স্থায়ী কর্মীদেরই কাজে লাগানো হচ্ছে যা নজীর। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গণনার সময় বিভিন্ন ঘরে ‘বাইরের লোক’ ঢুকে পড়েছিল বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। প্রশাসনের তরফে তাঁদের চিহ্নিত করা হয়নি। ফলে, গণনায় তার প্রভাব পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৯ সালেও লোকসভা ভোটে গণনাতেও রাজ্যের শাসক দলের তরফে একই অভিযোগ করা হয়েছিল। পুনর্গণনার দাবিতে ২০১৯ সালের ভোটে তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিতা হাইকোর্টে মামলাও করেছিলেন। সেই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
গণনায় বাইরের লোক ঠেকাতে আলাদা রংয়ের স্টিকার, গেঞ্জি বর্ধমানে
RELATED ARTICLES