নিজস্ব প্রতিনিধি,বাঁকুড়াঃ লক্ষ্মীদেবীর বাহন পেঁচা। কিন্তু সেই পেঁচার বদলে লক্ষ্মী যদি হাতির পিঠে চেপে থাকেন তাহলে অবাক হতে হবে বৈকি। না এটা কোনো কাকতালিয় বা কল্পনার ছবি নয়,হাতি উপদ্রুত রামকানালি গ্রামের মানুষ হাতির মুখ থেকে নিজেদের মাঠের ফসল তুলতে বছরের পর বছর ধরে কোজাগরি লক্ষ্মীপুজোর দিন এমনই গজলক্ষ্মীর আরাধনা করে আসছেন। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের রামকানালি গ্রামের অবস্থান একেবারে জঙ্গলের ভেতর। চারিদিকে জঙ্গলঘেরা এই গ্রামে একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে ধূমধাম সহকারে লক্ষ্মীপুজো হয়ে আসছে। কিন্তু এখানে গোড়া থেকেই লক্ষ্মী প্রতিমায় রয়েছে ভিন্নতা। এই গ্রামের লক্ষ্মী মন্দিরে কোজাগরি লক্ষ্মীপুজোর দিন যে প্রতিমার সামনে গ্রামবাসীরা ভক্তিভরে পুজো দেন সেই প্রতিমায় পেঁচার বদলে লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে থাকে হাতি। গ্রামবাসীদের দাবী জঙ্গল ঘেরা হওয়ায় প্রাচীন কাল থেকেই বছরভর গ্রামে লেগে থাকে হাতির উৎপাত। ফি বছর হাতির তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় গ্রাম লাগোয়া জমির ফসলের। এখনো দলে দলে হাতি এসে মাঝেমধ্যেই তান্ডব চালায় গ্রাম লাগোয়া ফসলের ক্ষেতে। এই পরিস্থিতিতে হাতির মুখ থেকে নিজেদের ফসল বাঁচিয়ে ধনলাভের আকাঙ্খায় প্রাচীন কাল থেকেই ধনদেবীর আরাধনার সাথে সাথে হাতিকেও দেবতা জ্ঞানে পুজো করা হয়ে থাকে গ্রামে। কালক্রমে হাতির পিঠে থাকা এই লক্ষ্মী প্রতিমা গজলক্ষ্মী হিসাবে পরিচিতি পায়। অতীতের সেই ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে গ্রামে। আজো কোজাগরি লক্ষ্মীপুজো এলেই রামকানালি গ্রামের সর্বজনীন মন্দিরে গজের পিঠে চড়া লক্ষ্মীর মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরী করা হয়। কোজাগরি লক্ষ্মীর সন্ধ্যায় গ্রামবাসীরা সেই গজলক্ষ্মী প্রতিমার সামনে ভক্তিভরে পুজো দিয়ে বলে ওঠেন – সর্বজ্ঞে সর্ববরদে সর্বদুষ্টভয়ঙ্করি,সর্বদুঃখহরে দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে।
হাতির উপদ্রব থেকে বাঁচতে গজলক্ষ্মীর আরাধনা করে আসছেন রামকানালির মানুষ
RELATED ARTICLES