সুবর্ণ ন্যায়ধীশঃ ‘শোলে’ নাকি একবারই হয়। অনেক নকল শোলের একটিতে খোদ অমিতাভ বচ্চন গব্বর সাজার ব্যর্থ চেষ্টা করার পর জনান্তিকে নিজেও কবুল করে বলেন, “না না। বার বার শোলে বানানোর শত চেষ্টা হলেও, আরেকটি শোলে আর হল না। আর হবেও না। আমার ‘গব্বর’ সাজার চেষ্টা করা ঠিক হয়নি। মানুষ গব্বর সিং বলতে একজনকেই চেনে”। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুক্তি পায় নির্মাতা জি.পি.সিপ্পির শোলে। এটিই ছিল জি.পি.র ছেলে রমেশের প্রথম বলিউডি ছবির পরিচালনা। শোলের কাহিনীকার সেলিম খান,জাভেদ আখতার অন্ততঃ হাফ ডজন নির্মাতার দরজায় ঘুরেও ছবিটি করার ব্যাপারে কাউকে রাজি করাতে পারেননি। শেষে রমেশ মাত্র চার লাইনের কাহিনীর প্রিল্যুড পড়েই বুঝে যান এ ছবি ব্যবসা দেবে। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে বাস্তবিকই গব্বর সিং নামে এক ডাকাতের ত্রাস ছিল ৫০’র দশকে। তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন রাজ্যেও কারন তার স্বভাব ছিল পুলিশ কর্তাদের ধরে ধরে নাক কান কেটে দেওয়া। এই গব্বরের ভয়াবহ ত্রাসকে ঘিরেই মূল গল্প। গোড়ায় গব্বরের ভূমিকায় ড্যানি ড্যানজন গাপ্পার কথা ভাবা হয়। কিন্তু,তার অনন্যা ছবির ব্যস্ততায় ‘ডেট’ দিতে পারছিলেন না ড্যানি। সে সময়ই ছবির ঠাকুরসাব সঞ্জীব কুমার গব্বরের রোলটির জন্য ভীষন ঝোলাঝুলি শুরু করেন। শেষে একটি থিয়েটার দেখতে গিয়ে অতীতের অভিনেতা জয়ন্ত’র ছেলে আমজাদ খানকে আবিস্কার করেন সেলিম। জয় চরিত্রটির জন্য শত্রুঘ্ন সিনহার কথা ভাবা হয়। তিনিও ‘ডেট’ দিতে পারেন নি। ওদিকে ধর্মেন্দ্র তখন ষ্টার। তিনি ‘ঠাকুরসাব’ করবেন বলে গোঁ ধরে বসে রইলেন। “ওকে বোঝানো হয় ভীরু চরিত্রটাই এমন যার সাথে হেমামালিনীর মেলামেশা সবচেয়ে বেশি থাকবে। একথা শুনেই ধরম রাজি হয়ে যায়”,বলে মুম্বইয়ের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন রমেশ। ‘শোলে’ ভারতীয় ছবির একটি মাইল ফলক। তাই,বলিউডে যে কোনো হিট ছবি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয় একটিই কথা- ‘শোলের আগে বা শোলের পরে’। ছবির অন্যতম কাহিনীকার সেলিম খান বলেন, “ভাবুন গোড়ায় এ ছবি কেউ বানাতেই চাইছিল না। আর সেই শোলেই ইতিহাস সৃষ্টি করল”।শুধু ছবির নির্মাণই নয়। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম তিনটি সপ্তাহ সিনেমা হলে মাছি মারার মতো অবস্থায় চলে যায়। বম্বে ট্রেড ম্যাগাজিন ও বক্স অফিস ছবিটিকে কার্যতঃ ফ্লপ তকমাও দিয়ে দেয়। তখনি,জাভেদ আখতার শুধু নয়,অমিতাভ বচ্চন নিজেও বলেন, “ছবির দুর্দশা দেখে বেশ কিছু দৃশ্য নতুন করে শ্যুট করার কথা ভাবা হয়। বিশেষ করে ছবির শেষ দিকে জয়ের মৃত্যু দৃশ্য বাদ দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে ফেরানোর পরিকল্পনা হয়। কারন,বলা হয় – দর্শক জয়ের মৃত্যু ঠিক মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু,সেলিম-জাভেদ বললেন আরো কিছুদিন দেখে নিতে। আশ্চর্যের বিষয়,ঠিক তার পরের সপ্তাহ থেকেই দারুন ব্যবসা দিতে শুরু করে শোলে। তার পরেরটা ইতিহাস”। এই ছবিটি মুম্বই’র মিনার্ভা হলে টানা ৫ বছর ধরে চলার রেকর্ড সৃষ্টি করে। দেশের ১০০টি হলে ৫০ সপ্তাহ রমরমিয়ে চলে। শোলে কি একেবারেই ইউনিক আইডিয়ার ছবি? না। ছবিটি আদতে বেশ কয়েকটি হলিউডি ছবির বিভিন্ন জায়গা থেকে ইন্সপায়ারড। যেমন ‘সেভেন সামুরাই’, ‘ম্যাগনিফিশেন্ট সেভেন’, ‘ওয়ানস আপঅন এ টাইম ইন ওয়েষ্ট’ নামের বিগ বাজেটের ছবিগুলি। ছবির বিখ্যাত ‘ইয়ে দোস্তি’ গানটির শ্যুটিং ২১ দিন ধরে চলে,আর জয়া ভাদুড়ির বাতি নেভানোর দৃশ্যটি ২০ দিন ধরে শ্যুট করা হয়। আর গব্বর সিং-র ভারত মাতানো ‘কিতনে আদমি থে’ অংশটির রিটেক হয় ৪০ বার। এমনি এমনি কি আর একটি ছবি ইতিহাস হয়? – বললেন নির্মাতা সুভাষ ঘাই। তিনি বলেন, “আজকাল কেউ ভাবতে পারে যে একটি ছবির শ্যুটিং আড়াই বছর ধরে চলতে পারে!” ছবিটির শ্যুটিং শুরু হয় ২ অক্টোবর ১৯৭৩ আর মুক্তি পায় দেশের স্বাধীনতা দিবসের দিন ১৫ আগস্ট,১৯৭৫ এ। ছবিটির ৮০ শতাংশরই শ্যুটিং হয় ব্যাঙ্গালোরের কাছে রামনগরমের পাহাড় ঘেরা জায়গায়। রাস্তা,ব্রিজ নির্মাণ করে একটি আস্ত গ্রামকেই বসানো হয় রামনগরমে। ছবিতে যার নাম রামগঢ়।
আড়াই বছর ধরে শ্যুটিং এ রামনগরম হয়ে গেল রামগঢ়
RELATED ARTICLES