কথা নিউজ সার্ভিস,আসানসোলঃ
শেষে সেই বহিরাগতই!
হাজার বিবাদ,অসন্তোষ আর প্রতিপক্ষের হেভিওয়েট প্রার্থী বলিউডের বিহারীবাবু কে উড়ে আসা বহিরাগত বলে কটাক্ষের পরেও বিজেপি শেষে আসানসোলের প্রার্থী করলো এক বহিরাগতকেই – যা নিয়ে তুমূল গোঁসা এখন গেরুয়া পার্টির অন্দরেই। শনিবার বিকেলে বিজেপি প্রথম দফায় এ রাজ্যের যে ২০ টি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে আসানসোলের প্রার্থী করা হয়েছে ভোজপুরি গায়ক পবন সিংকে। ওই আসনের তৃণমুল কংগ্রেস প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। ২০১৯ এ ওই আসনে পুনর্নির্বাচিত হন তৎকালীন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। এরপর তিনি তৃণমূলে যোগ দিলে,২০২২ এ ওই আসনে নতুন সাংসদের খোঁজে উপনির্বাচন হলে,আসনটিতে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালকে ৩ লক্ষের বেশি ভোটে পরাজিত করেন বিজেপি থেকেই তৃণমূলে আসা বলিউড স্টার শত্রুঘ্ন। এদিকে,লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা এখনোও হয়নি। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এখনোও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। এরই মধ্যে দলের পোস্টারবয় নরেন্দ্র মোদীর বঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনের গোধূলি বেলায় আচমকাই আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে ভোটের হাওয়া তুলতে চাইলো বিজেপি। কিন্তু,সেই প্রচেষ্টায় শনিবার আসানসোলে বিষম খেলো দল। কারণ,দলের স্থানীয় নেতৃত্ব সহ ক্যাডারদের প্রত্যাশা ছিল দল এবার অন্ততঃ আসানসোলেরই কাউকে প্রার্থী করবে।
সেক্ষেত্রে তৃণমুল কংগ্রেস ছেড়ে আসা সে দলের জেলা সভাপতি,প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তেওয়ারির নামেই চর্চা ছিল সর্বাগ্রে। তাই,বিজেপি মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন মঞ্চ,সংগঠনের পক্ষ থেকে আসানসোলের জায়গায় জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্নকে পরিযায়ী পাখির সাথে তুলনা করে বহিরাগত পোস্টার দিয়ে কটাক্ষ করা হচ্ছিল। আসানসোলের আসনটিতে অবাঙালী ভোটারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যা মাথায় রেখেও জিতেন্দ্রর ব্যাপারে প্রত্যাশী ছিল স্থানীয় বিজেপি। কিন্তু,সব আশায় জল ঢেলে সেই একজন বহিরাগত ভোজপুরি গায়ককে আসানসোলের প্রার্থী করলো দিল্লীর নেতৃত্ব। যা নিয়ে দলের অন্দরেই ছড়িয়ে পড়েছে বিস্তর ক্ষোভ। জিতেন্দ্র এদিন নিজের মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া না দিলেও, নির্লিপ্ত থেকে ঠারেঠোরে তার নারাজগী বুঝিয়ে দিয়েছেন। কারণ,তিনি বেশ বুঝতে পেরেছেন,দল তাকে কৌশল করে ব্যবহার করে,আসল সময়ে ছুঁড়ে ফেলেই দিলো। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এক জেলা নেতা বলেন, “এখনোও ওর চৈতন্য না ফিরলে বুঝতে হবে ওর ব্যক্তিত্বের ঘাটতি আছে”। একটি সূত্র জানিয়েছে,ঘনিষ্ঠ মহলে জিতেন্দ্র বলেছেন, “মানুষ চাইলে দলীয় প্রার্থী জিতবেন। কে জিতেন্দ্র, কে পবন – সেটা কতটা ফ্যাক্টর তা বোঝার সময় নেই দিল্লীর সাহেবদের!”
পবনের জন্ম বিহারের আরাহ জেলার জকাহরি গ্রামে, ১৯৮৬ তে। বাঙলার সাথে তার যোগ বিশেষ নেই। তিনি তার চাচা অজিত সিং’র কাছে গান শিখে ছোটবেলা থেকেই গান গাইতে শুরু করেন। এখন গানের কারণে তার ভক্তরা তাকে ভোজপুরি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ‘পাওয়ার স্টার’ বলে ডাকে। আসানসোলে অবাঙালী অধ্যুষিত কলিয়ারি অঞ্চলের যুবকদের মধ্যে অবশ্য তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।পবনের আসানসোলের মাটিতে পদার্পণ নিয়ে তাহলে কি বলছেন সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা? তার দলের নেতা,মন্ত্রী মলয় ঘটক কে ‘ম্যাজিক ম্যান’ বলে ডাকেন বিহারী বাবু। শনিবার ফোনে বলেন, “জানতামই না যে পবন তাহলে আসানসোলে জন্মেছিল! ভাজপার ভূগোল জ্ঞান দেখে ভালই লাগলো। আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলায় ভাবি আর বাঙলার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখি আমাদের নেত্রীকে অনুসরণ করে। আমি বহিরাগত,আর ওই পবন আসানসোলের ঘরের ছেলে? ওরা আসানসোলের মানুষকে কি চিরটাকালই একইরকম করে বোকা ভাববে,বলুনতো!”