নিজস্ব প্রতিনিধি,বাঁকুড়াঃ জিলাপি শব্দটা শুনলেই জীব থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। আর সেই জিলাপির সাইজ যদি হয় আড়াই থেকে তিন কিলো তবে আপনার জ্বীবের স্বাদের সঙ্গে সঙ্গে মনের স্বাদও মিটবে। হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনেছেন আড়াই থেকে তিন কিলো ওজনের জিলাপি তৈরি হয় বাঁকুড়ার প্রাচীন জনপদ কেঞ্জাকুড়ার। তবে এই জিলাপি সারা বছর পাওয়া যায় না। বিশেষ করে ভাদ্র সংক্রান্তি উপলক্ষে হওয়া বিশ্বকর্মা পূজা ও ভাদু পূজায় তৈরি হয় এমন জাম্বো ঝিলাপি। খেতে সুস্বাদ একই রকমভাবে মচমচে খাস্তা থাকে দীর্ঘদিন তাই এই প্রমাণ মাপের জিলাপির চাহিদাও তুঙ্গে। দেড়শ টাকা কিলো দরে এমন জিলাপি খেতে হলে আপনাকে আসতেই হবে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুরা গ্রামে। তবে স্থানীয়দের দাবি কেঞ্জাকুড়ার জিলাপি বিখ্যাত নয়, জেম্বো জিলিপির জন্যই বিখ্যাত কেঞ্জাকুড়ার। আর এই জিলাপি জেলা রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে পাড়ি দিয়েছে সুদুর আমেরিকায় দাবি এলাকাবাসী থেকে কারিগর দোকানদার সকলের। কথিত আছে দশম শতকের শুরুতে ‘কিতাব ঊল তারিখ’ নামে একটি পারসিক বই-এ উল্লেখ পাওয়া যায় একটি বিশেষ পদের নাম যার নাম ‘জুলবিয়া’ তা পরবর্তীতে ভারতে এসে জিলিপি নাম নেয়। ভোজন রসিক বাঙালি যেখানেই যাক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সাথে সাথে খাবারের খোঁজ ঠিকই রাখে। আর সেই খাবার যদি মিষ্টি হয় তাহলে তো বলারই নেই।যা শুধু বাংলাবাসী নয় সারা ভারতীয়দের মিষ্টান্নের ইতিহাসে অন্যতম প্রিয় সংযোজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিলিপি ভোজনরসিক বাঙালির কাছে একটা অন্যতম সেরা মিষ্টি। রাস্তার ধারে যদি দেখতে পায় গরম গরম প্যাঁচানো রসালো জিলাপি তৈরি হচ্ছে একবার না চেঁখে দেখলে বাঙালির মন হাঁকপাক করে। বাঁকুড়া জেলার প্রাচীন জনপদ কেঞ্জাকুড়া দোকানগুলিতে এ সময় ঢু মারলেই দেখা মিলবে জাম্বু জিলিপির। চালগুড়ি, বিরির ডাল, বেসন, ময়দা সঙ্গে বিভিন্ন রং দিয়ে তৈরি করা হয় জিলিপির নির্যাস। সার দিয়ে থাকা উনানে বিরাট বিরাট কড়াইয়ে সেই নির্যাস মিষ্টান্ন কারিগরেরা নিপুন হাতের কৌশলে প্যাচ দেন জিলাপির। এরপর বিভিন্ন রং দিয়ে করা হয় জিলিপির উপর নকশা, চাহিদা অনুযায়ী উপহার হিসেবে লিখে দেওয়া হয় নাম ও ঠিকানাও। বাংলার ভাদু পূজা এবং বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে নাওয়া খাওয়া রাতদিন ভুলে জিলিপী তৈরিতে কারিগরদের চরম ব্যস্ততা। এক একটি জিলিপির ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ৩ কেজি অবদি হয়ে থাকে।বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে এই জিলিপি ক্রয় করার জন্য বাঁকুড়া জেলা সহ অন্যান্য জেলা থেকে আগত মানুষদের লম্বা লাইন পড়ে। মূলত উপহার হিসাবে দূর দূরান্তে পাড়ি দেয় বাঁকুড়ার এমন জিলাপি। এছাড়াও আত্মীয় স্বজনদের আবদার মেটাতে হিমশিম খেতে হয় স্থানীয় ক্রেতাদের। চাহিদা অনুযায়ী বরাত মেটাতে রাত দিন এক করে চলে জাম্বো জিলাপি তৈরির ব্যস্ত।
বিশ্বকর্মা পুজোয় বাঁকুড়ায় দুই থেকে আড়াই কিলো ওজনের জাম্বো জিলাপি
RELATED ARTICLES