সাথী প্রামানিক,পুরুলিয়া, ১৩ জানুয়ারিঃ কাশীপুর থানার গৌরাঙ্গডি গ্রামের গণ পিটুনির শিকার তিন সন্যাসীকে নিয়ে বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো পুরুলিয়া শহরের কালী মন্দিরে পূজো দিলেন। তিন সন্ন্যাসী সহ পাঁচ জন উত্তর প্রদেশের বেরেলী থেকে গত বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার কাশীপুর থানার গৌরাঙ্গডি গ্রাম দিয়ে যাচ্ছিলেন গঙ্গাসাগরের উদ্দেশ্যে। তাঁদের গাড়ি গ্রামে এসে পৌছয়। এক সন্যাসী বলেন, তারা যখন ওই খানে এসে পৌঁছন, সেই সময় স্থানীয় একটি দোকানদারকে জিজ্ঞেস করেন বাঁকুড়া যাওয়ার রাস্তা কোন দিকে। সেই সময় দোকানদার তাদের কাছে জানতে চান তারা কোথায় যাবেন। তারা জানান গঙ্গাসাগর যাবেন। সেই সময় তাদের গাড়িটিকে আটকানো হয়। তারপর তাদেরকে ঘিরে ধরে ব্যাপক মারধর করে বলে অভিযোগ। ভাংচুর হয় তাঁদের গাড়ি। পুলিশ খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করে সুরক্ষিত স্থানে রাখে। শুক্রবার খবর পেয়ে কাশীপুর থানায় গিয়ে বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ও বিজেপি নেতৃত্ব সন্ন্যাসীদের পুরুলিয়ায় নিয়ে আসেন। বিজেপি সাংসদের অভিযোগ,সন্ন্যাসীদের গাড়ি যখন কাশীপুর থানার গৌরাঙ্গডি গ্রামে পৌঁছয় তখনই এক সিভিক ভলেন্টিয়ার যার নাম সেখ আনোয়ার তাদের গাড়ী আটকায়। তারপর স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে তাদের গণপিটুনি দেয়। তাদের উলঙ্গ করে পিটুনি দেওয়া হয়। সাংসদের অভিযোগ, এই গণ পিটুনির শিকার সন্যাসীদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় তাদের পেছনের দরজা দিয়ে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে কাশিপুর থানার পুলিশ। সাংসদ নিগ্রহের ঘটনার জন্য সন্যাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। এই ঘটনার সাথে যুক্ত বারো জনকে গ্রেফতার করে কাশিপুর থানার পুলিশ। আজ তাদের রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। সাধু নিগ্রহের ঘটনায় ৫ জনের ৪ দিন পুলিশ হেফাজত,৭ জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল রঘুনাথপুর মহকুমা আদালত। ধৃতদের নাম সুনীল বাউরি, বিমল কৈবর্ত, অনিল কৈবর্ত, হীরালাল প্রামানিক, পল্টু হালদার ,রাজেশ হালদার, মিহির কৈবর্ত, মলয় দে ,অনন্ত হালদার, মেঘনাথ দে, রাজকুমার হালদার, তারকনাথ হালদার। আক্রান্ত সন্ন্যাসীদের মধ্যে বরিষ্ঠ মথুর গোস্বামী বাড়ির পথে রওনা হওয়ার আগে বলেন, “আমি হামলাকারীদের ক্ষমা করছি। তাদের কোনও শাস্তি যেন না হয়। ওঁরা ভুল করেছেন। ভাষাগত সমস্যার কারণে ওঁরা ভুল করেছেন। পুলিশ সময় মতো উদ্ধার না করলে আরও ক্ষতি হতে পারত।” ঘটনায় আলোড়ন পড়েছে রাজনৈতিক মহলেও। নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “এটা নিন্দনীয় ঘটনা। পুলিশ দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। বিজেপি রাজনীতি করতে গালগল্প করছে। এটা সমাজে প্রভাব পড়লে তার দায় নেবেন বিজেপি নেতারা।” এদিকে ওই হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক সহ বাকি দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে কাশীপুর থানায় অবস্থান বিক্ষোভ করে বিজেপি। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি রাজেশ চিন্না ও রাজ্য কমিটির সদস্যা গৌরী সিং সর্দারের নেতৃত্বে থানায় একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। একই দাবিতে পুরুলিয়া সদর থানাতে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেতারা।
পুরুলিয়ায় সন্ন্যাসী নিগ্রহের ঘটনায় নিন্দার ঝড়
RELATED ARTICLES