সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ এবার দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ডাক্তারি ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হলেন। শুক্রবার রাতের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে ওই বেসরকারী কলেজে। শনিবার কলেজের মেডিকেল ছাত্রছাত্রীরা কলেজ চত্বরে বসে পড়ে এই ঘটনার নিন্দার সঙ্গেই অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য পারিজাত গাঙ্গুলি নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনিও অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। এমনকি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও দুর্গাপুরে আসা নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাদের সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে সিপিএমের একটি প্রতিনিধি দল বিষয়টি নিয়ে ওই কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের সেখানে ঢুকতে না দেওয়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, “আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, মেয়েটির পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। আমরা চাই দোষীরা যতো দ্রুত সম্ভব ধরা পড়ুক।” উড়িষ্যার জলেশ্বরের বাসিন্দা নির্যাতিতা ওই ডাক্তারি ছাত্রী বর্তমানে আই কিউ সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিভাবে ঘটল এই চরম ঘটনা? জানা গেছে, ওই ছাত্রী তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে শুক্রবার রাতে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে খাবার খেতে বের হয়েছিলেন। তারা দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার ফাঁকা রাস্তা দিয়ে আসার সময় পাঁচজন যুবক ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে পাশের জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে বলে ওই তরুণী অভিযোগ করেছেন। কিন্ত এক্ষেত্রে ছাত্রীর সঙ্গে থাকা তার বন্ধুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সময় ওই ছাত্রীর বন্ধু সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে আবার সেই নাকি নির্যাতিতা ছাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি করেন। জানা গেছে, পুলিশ ওই ছাত্রকে আটক করেছে। খবর পাওয়ার পর নির্যাতিতা ছাত্রীর মা বাবা দুর্গাপুরে এসে মেয়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং এখানে তার মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে তারা তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। ছাত্রী ও তার পরিবারের দাবি পাঁচজন তাঁকে ধর্ষণ করেছে। পুলিশ এদের খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে। শিল্প শহর দুর্গাপুর বর্তমানে শিক্ষানগরীর পাশাপাশি স্বাস্থ্য নগরীও হয়ে উঠেছে। এখানে বেশ কয়েকটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ,নার্সিং কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং,ম্যানেজমেন্ট কলেজ রয়েছে। এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে আসে। এই ধরনের কোনো ঘটনা দুর্গাপুরে প্রথমবার ঘটে যাওয়ায় বিভিন্ন কলেজে পাঠরত ভিনরাজ্যের ছাত্রীদের এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগ সঞ্চার করবে বলে মনে করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেনি। ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ। অন্যদিকে,ওই কলেজের তরফে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে তারা বিষয়টির উপর নজর রেখেছেন এবং পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত করছে। নির্যাতিতা ছাত্রী ও তাদের পরিবারের পাশে তারা আছেন। অন্যদিকে,ঘটনাটি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওই মেডিকেল কলেজের কাছে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এদিকে,ঘটনার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার আর জি কর এবং কসবার ল কলেজের উদাহরন তুলে অভিযোগ করেছেন,সঠিক সময়ে দোষীদের শাস্তি না হওয়ার কারনেই এই ধরনের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
নিরাপত্তার বিষয় মেডিকেল কলেজের কাছে রিপোর্ট তলব রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের
RELATED ARTICLES