জয় লাহা,দুর্গাপুর,২৩ সেপ্টম্বরঃ ঝাড়খন্ডে প্রবল বর্ষন। আর তার জেরে অজয় নদে হড়পা বান। জলের তোড়ে ভেঙে পড়ল কাঁকসার শিবপুরে অজয় নদীর ওপর তৈরী অস্থায়ী রাস্তা। হড়পা বানে মাঝ নদীতে উল্টে গেল পাথর বোঝাই ডাম্পার! বরাত জোরে প্রাণ বাঁচলো চালক ও খালাসির। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার শিবপুর অজয় নদের ওপর অস্থায়ী সেতুতে। তাতেই একপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভুমের বেশ কিছু গ্রামের। দুর্ভোগে পড়েছে সাধারন মানুষ। কাঁকসার শিবপুরের অজয় নদীর অপরপ্রান্তে বীরভুমের জয়দেব কেঁন্দুলী। মুলত দুই জেলার যোগাযোগের অস্তায়ী রাস্তা। মকরসংক্রান্তির মেলা ছাড়াও সারা বছরই হাটবাজার সহ অন্যান্য কাজে দুই জেলার মানুষের যোগাযোগ রাস্তা ছিল অজয় নদীর ওপর। প্রতিবছরই বর্ষার জল নামলেই সিমেন্টের পাইপ বসিয়ে পাথর, মোরাম, মাটি দিয়ে রাস্তাটি তৈরী হয়। লাল মাটির ধুলো ঠেকাতে দেওয়া হয় ভাঙা রাস্তার পিচের টুকরো। তার ওপর দিয়ে সাইকেল,রিক্সা, বাস,লরি যাতায়াত করে। জয়দেবে সপ্তাহে দুদিন আশপাশের এলাকার বড় হাট বসে মঙ্গলবার ও শনিবার। কাঁকসার শিবপুর,অজয়পল্লী সহ প্রায় ২৫ টি গ্রামের কৃষক,ছোট ব্যাবসায়ী জয়দেবের ওই হাটে দোকান বসায়। এছাড়াও এপার-ওপারে স্কুল,কলেজ অনেক পড়ুয়া টিউশিন পড়তে যাওয়া আসা করে। শিবপুর এলাকার মানুষের এককথায় সদর বাজার জয়দেব কেন্দুঁলী। শুক্রবার রাতভর ঝাড়খন্ডে প্রবল বৃষ্ট হয়। এছাড়াও অজয় নদী উপকুলবর্তী এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। আর তাতে রাত্রে অজয়নদীতে আচমকা হু হু করে জল বাড়তে থাকে। শনিবার সকালে গ্রামবাসীরদের নজর পড়ে জলের তোড়ে অস্থায়ী ওই রাস্তা ভেঙে পড়েছে। জলস্রোতে ভেঙে পড়ে অস্থায়ী রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে রাত্রে বীরভুম থেকে পাথর বোঝই ডাম্পার আসছিল দুর্গাপুরে। মাঝ নদীতে আসতেই জলস্রোতে রাস্তা ভেঙে পড়ায় উল্টে যায়। যদিও বেগতিক বুঝে আগেই নেমে পড়েছিল ডাম্পারের চালক ও খালাসী। সাঁতার কেটে কোনও রকমে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছায় চালক ও খালাসি। সেই সময় অস্থায়ী সেতুতে কাজ করছিলেন কয়েকজন নির্মাণ কর্মী। তাঁরাও সাঁতার কেটে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, “তখন অনেক নিচে জল ছিল। কিন্তু জল বাড়তেই ডাম্পারটি বসে যায়। কোনও রকমকে চালক,খালাসি সাঁতার দিয়ে পাড়ে আসে।” খবর পেয়ে দুর্ঘটনা ঠেকাতে তৎপর হয় স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পুলিশ প্রশাসন। ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। পঞ্চায়েত থেকে গ্রামবাসীদের সতর্ক করা হয়। এদিকে রাত থেকে জলরাশি বাড়তে থাকার ফলে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে এলাকাবাসী। উল্লেখ্য, চলতি বছর গত ২৬ আগষ্ট একইরকমভাবে হড়পা বানে ভেঙে যায় ওই অস্থায়ী রাস্তা। প্রায় একমাসের মধ্যে আবার ভেঙে পড়ায় দুর্ভোগে বাসিন্দারা। নতুন সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবী তুলেছে বাসিন্দারা। বছর পাঁচেক আগে অজয় নদীর ওপর সেতু তেরীর প্রস্তাব তোলেন তৎকালীন গলসীর বিধায়ক অলোক কুমার মাঝি। সেই সেচ দফতর থেকে অনুমোদন হয়। এবং কাজও শুরু হয়। সেতুর কাজ হলেও সংযোগকারী সড়কের কাজ মাঝপথে জমি জটে আটকে পড়ে। কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য জানান,” অজয় উপকুলবর্তী এলাকায় গত দুদিন থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমান বেড়েছে ঝাড়খন্ডে। নদীতে জলও আসছে। তার ফলেই এই বিপত্তি। জলের তোড়ে প্রতিবছরই অস্থায়ী রাস্তাটি ভেঙে পড়ে। সাধারন মানুষের ভোগান্তি হয়। নদীর ওপারে জয়দেবে মঙ্গলবার ও শনিবার হাট বসে। সেখানে রুজির তাগিদে এপার থেকে প্রায় শ’ দুয়েক সব্জি বিক্রেতা, অন্যান্য হকার জয়দেব হাটে দোকান বসাতে যায়। রাস্তা ভেঙে পড়ায় তাদের রুজিতে টান পড়ল। দুর্ঘটনা ঠেকাতে এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে, নদীতে এখন পারাপার যেন না করে। নতুন সেতু নির্মানের কাজ চলছে। জমি জট মিটে গেছে। আশা করছি ৫-৬ মাসের মধ্যে নতুন সেতু চালু হয়ে যাবে।”
অজয়ে হড়পা বানে অস্থায়ী রাস্তা ভেঙে বিপত্তি,উল্টে গেল পাথরবোঝাই ডাম্পার
RELATED ARTICLES