Thursday, November 14, 2024
Google search engine
Homeদক্ষিণবঙ্গউজ্জ্বলের সিটি সেন্টারে এতো উন্নয়ন,আর সেখানেই আঁধারে ঘাসফুল

উজ্জ্বলের সিটি সেন্টারে এতো উন্নয়ন,আর সেখানেই আঁধারে ঘাসফুল

কথা নিউজ সার্ভিস
দুর্গাপুর: দল নাকি এবার ফাটাফাটি করেছে। তাই, ফূর্তিতে সবুজ মিষ্টি খাচ্ছেন, সপার্ষদ আবির মাখছেন হরষে উল্লাসে আমোদিত উজ্জল মুখার্জী। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের ২ নং ব্লকের সভাপতি। এসবের মাঝেই এক পার্টি অন্তপ্রাণ যুবক আর এক প্রৌঢ় ‘মমতা প্রাণ’ সহমর্মী  বিড়বিড় করে বললেন, “এর তার সাথে সেটিং করে নিজের ওয়ার্ডেই বিজেপিকে কৌশলে জেতালো আর এখন ফূর্তি দেখো!” তাদেরই কথায়, “তৃণমুলের পদে থাকা আরেক ছদ্মবেশী বিজেপি টিএমসি ভাঙ্গিয়ে দুহাতে কলকারখানায় কামাচ্ছে, আসানসোলে ভাগ পাঠাচ্ছে আর ঘরে বাইরে ফিসফাস ‘জয় মোদী’ করে ভাজপাকে জেতাচ্ছে। বলারও কেও নেই, দেখারও কেউ নেই।”

দুর্গাপুর পুরসভার ৪৩ টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব থেকে বেশি উন্নয়নের কাজ হয়েছে কোন ওয়ার্ডে? – শহরের যেকোনো জায়গায় এই প্রশ্নের উত্তরে সবাই এক কথায় বলবেন – ‘২২ নম্বর ওয়ার্ড, যেটা শহরের আসল বাবুপাড়া সেই সিটি সেন্টারে।’ প্রায় প্রতিটি রাস্তা ম্যাসটিকস। ঝকঝকে এলইডি স্ট্রীট লাইট। অন্য জায়গার তুলনায় পর্যাপ্ত পানীয় জল। নগর পরিষেবায় বিশেষ কোনও খামতি নেই। তা সত্ত্বেও, ২২ নং ওয়ার্ডে ১৩৫৭ ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। এত উন্নয়নের পরেও পরাজয় কেন? শুধু সিটি সেন্টারের  বুথে ১৬৯২ ভোটে জিতলো বিজেপি। কেনো? বারে বারে?
উত্তর খুঁজতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল একাধিক কারণ। বাসিন্দাদের বক্তব্য, উন্নয়ন হলেও দুর্নীতি ও অনিয়মের পাহাড়ে তা চাপা পড়ে গেছে। অনিয়মের ফল ভোগ করতে হচ্ছে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “পুরসভাকে আমরা রাজস্ব দিচ্ছি। অথচ আমাদের কথা চিন্তা না করে এইসব উটকো নেতারা পথঘাট জুড়ে বাণিজ্য করতে জবরদখলকারীদের ঢালাও বসিয়েছে। সিটি সেন্টারের অধিকাংশ রাস্তা দিয়ে এখন হাঁটা যায় না। গোটা ফুটপাত হকারদের দখলে। রাস্তার ওপর দেদার গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। টাকা নিয়ে বিহার থেকে ডেকে ডেকে এনে লোক বসিয়ে নিজেদের পকেট গরম করছে আর যানজটে নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।” তাদের ক্ষোভ – পার্কিং প্লেস ছাড়াও রেসিডেন্সিয়াল এলাকার বাড়িতে কর্মাশিয়াল অনুমতি দেওয়া হচ্ছে দেদার। অধিকাংশ বাড়ির সামনেই হয় খাবারের দোকান, ধাবা, নয় শাড়ি গয়নার দোকান, বা বিউটি পার্লারের খুলেআম সেক্স ব্যবসা।” কারো কারো ক্ষোভ ‘গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে রাস্তার ওপর। পয়সা তুলছে পার্টির লোকেরা।’

বাসিন্দারা যে মিথ্যা অভিযোগ করছেন না সেটা সিটি সেন্টার এলাকায় একটু ভালো করে ঘুরলেই বোঝা যাবে। এডিডিএ দপ্তর সংলগ্ন এলাকাটি দেখলে মনে হবে এটা অফিস পাড়া নয়, শহরের সব থেকে বড় ফলের বাজার। রাস্তার ধারে সার দিয়ে সব ফলের দোকান। একটু এগিয়ে স্মার্ট বাজারের সামনের রাস্তায় সার দিয়ে খাবারের দোকান। সেখানে যারা খাবার খেতে আসেন তারা প্রায় প্রত্যেকে রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং করেন। ফলে চওড়া রাস্তা সরু গলিতে পরিণত হয়। অম্বুজা নগরীর বাসিন্দা ডিএসপির এক আধিকারিক গৌতম মন্ডল বলেন, “বিকেলে ডিউটি থেকে বাড়ি ফেরার সময় স্মার্ট বাজারের সামনের রাস্তা দিয়ে  আসা যায় না। রাস্তার ওপর বাইক, চারচাকা দাঁড়িয়ে থাকে সবসময়। ডক্টরস কলোনীতে একটি বাড়িতে রেস্তোরাঁ তৈরির অনুমতি দিয়েছে পুরসভা। কোনও পার্কিং নেই। রেস্তোরাঁয় যারা আসেন তাদের গাড়ি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। নরক যন্ত্রণা। বাধ্য হয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এলাকার বাসিন্দারা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ।”

পাশাপাশি, রোদ গরমে বা ঝড় বৃষ্টিতে মাসে পাঁচ-ছ দিন চার-ছ ঘণ্টা করে লোডশেডিং বা লো ভোল্টেজ। বহু গ্রাহকের ইলেকট্রনিক পণ্য বরবাদ হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। নির্বিকার বিদ্যুৎ দপ্তর। আরো নির্বিকার উজ্জলের মতো নেতারা।

এইসব অনিয়মের প্রভাব অবশ্যই পড়েছে ইভিএম মেশিনে। তাই, এত উন্নয়ন করা সত্ত্বেও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে পরাজিত তৃনমূল। কি করছেন তোষামোদ প্রিয় উজ্জল বা তাকে ঘিরে আলো করে বসে থাকা বেলচার দল? প্রশ্ন এটাও – এইসব বেলচারা আদৌ কি তৃণমুলের লোক? আইপ্যাকে’র এক মহিলা অফিসার সিটি সেন্টারে উজ্জলের একটি অফিসে ভোটের অল্প ক’দিন আগেও কেনো দলের গাদা গাদা ফ্লেক্স, পতাকা, ব্যানার লাট হয়ে পড়ে রয়েছে, তার কৈফিয়ত চেয়েছিলেন দলের এইসব পরিযায়ী ‘উড়ুক্কু মাছে’দের কাছে। মাথানত বসংবদরা নাকি তাদের ঝকঝকে সাহাবের নির্দেশের কথা জানান। তাহলে? উজ্জ্বল আসলে কি করছিলেন? কি চাইছিলেন? না। উজ্জ্বল এনিয়ে এখনো কিছুই বলেননি বটে, তবে দল নাকি যা বোঝার বুঝে গেছে, বলে একটি সূত্র জানায়।

আগামী আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে সম্ভবত পুরসভা ভোট। কী ভাবে এই বদহালের রিকভারি হবে?  প্রশ্নের উত্তরে দলের মহিলা ফ্রন্টের জেলা নেত্রী অসীমা চক্রবর্তী বলেন, “শুধু ২২ নম্বর নয়, মোট ৩৩ টা ওয়ার্ডে আমরা পরাজিত হয়েছি। আমি নিজের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পরাজিত হয়েছি। কী কারণে পরাজয় হয়েছে তা পর্যালোচনা করতে হবে।” তবে, দলীয় সূত্রের খবর যে সব ওয়ার্ডে পরাজয় হয়েছে সেই ওয়ার্ডগুলির কাউন্সিলরদের অনেকেই এবার আর টিকিট পাচ্ছেন না। রাজ্যের মন্ত্রী তথা দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার বলেন, “হারের কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। একাধিক কারণ উঠে এসেছে। কী ভাবে রিকভারি হবে তা সিরিয়াসলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

আর উজ্জলের মতো শাসন ক্ষমতায় থাকা দলে সুখের পায়রাদের এভাবে আদর করে পুষে রাখলে তার সুফল কি আদৌ পাবে ঘাসফুল? নাকি, ফের চুপি চুপি সিপিএমের সাহায্যে পদ্ম চাষ করবেন পরিযায়ীরা, আঁধারে ঢেকেই যাবে উজ্জলের সিটি সেন্টার? – উত্তর মিলবে আর দু চার মাসেই!

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments