নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ বিডিওদের সাথে পঞ্চায়েত প্রধানদের ‘অশুভ আঁতাত’ আর রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় আটকে গিয়েছে অনেক কাজ। দিলীপ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ বছরের উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সুরিন্দর সিং আহলুওয়ালিয়া। প্রত্যেক সাংসদরা তাঁদের তহবিলের টাকায় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সুপারিশ পাঠান জেলা শাসকদের কাছে। জেলা শাসকরা জেলা পরিকল্পনা আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে বিডিও,পুরসভার কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় সাংসদের সুপারিশ করা প্রকল্পের প্রয়োজন আছে কি না। জেলার পরিকল্পনা আধিকারিকের কাছে সম্মতি প্রকাশ করলেই জেলা শাসক কাজের অনুমতি দেন। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি হোটেলে সোমবার সকালে পাঁচ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন দিলীপ ঘোষ কে সঙ্গে নিয়ে বিদায়ী সাংসদ সুরিন্দর সিং আহলুওয়ালিয়া আহলুওয়ালিয়ার অভিযোগ,”এলাকায় উন্নয়নের প্রকল্প করার জন্য জেলা শাসকের কাছে সুপারিশ পাঠানোর পর সেই প্রকল্পের প্রয়োজন কি না বিডিওর কাছে পাঠানো হলে বিডিওরা পঞ্চায়েত প্রধানের সাথে গোপন বৈঠক করে সম্মতিতে না করে দেন। ফলে আটকে যায় সাধারণ মানুষের প্রাপ্য উন্নয়নমূলক কাজ। প্রত্যেক বছর প্রত্যেক সাংসদ তহবিলে পাঁচ কোটি করে টাকা দেওয়া হয়। পাঁচ বছরের মোট পঁচিশ কোটি টাকা। এই পাঁচ বছরের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির জন্য আইসোলেশন সেন্টার করার জন্য সাংসদ তহবিলের কিছু টাকা প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলেও পাঠানো হয়েছে। তারপরেও ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ২৯৪ টি প্রকল্প হয়েছে। সঙ্গে জমা থাকা বর্ধমান দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ শহিদুল হকের ১ কোটি ২৩ লক্ষ ৮৯ হাজারটাকা এবং তৃণমূল সাংসদ মমতাজ সংঘমিতার দু কোটি ৯৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকাও খরচ করেছেন তিনি। প্রান্তিক এলাকায় শ্মশানের চুল্লি, হাই মাস্ট লাইট সাধারণ মানুষকে চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছেন। সেইলের দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা সম্প্রসারণের অনুমোদন, হ্যালো স্টিলের বিলগ্নীকরণ আটকে আধুনিকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের দুর্গাপুর থারমাল পাওয়ার স্টেশনের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার ইউনিট প্রতিস্থাপনের অনুমোদন। পারাজ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের আধুনিকরণের কাজ করেছেন। কেন্দ্রপূর্ণ সহযোগিতা করলেও রাজ্য সরকারের কাছে সদুত্তর না পাওয়ায় কিছু জমি এখনো অধিগ্রহণ হয়নি। ফলে আজও আটকে মায়াবাজার রেল ওভারব্রিজের কাজ।” উত্তরবঙ্গের জনসভা থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে আক্রমণ করে সাধারণ মানুষকে বলেন, আপনারা কেন ওদেরকে ভোট দিয়েছেন। একশ দিনের কাজের টাকাতো আমরা দিয়েছি। আমরা শুরু করেছি কর্মশ্রী প্রকল্প। এ বিষয়ে দিলীপ ঘোষের পরিষ্কার বক্তব্য,”বিধায়ক সাংসদরা কোন উন্নয়নের কাজ করে না তাদের কাজ বিল পাস করা আইন পাস করা। বিধায়ক সাংসদদের কিছু করে টাকা দেওয়া হয় এলাকায় ছোট ছোট কাজ করার জন্য। সেই কাজও বিডিওদের দিয়ে আটকে দেওয়া হচ্ছে। উল্টে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, দিল্লি সরাসরি টাকা দেয় রাজ্য সরকারকে। কেন একশ দিনের কাজের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে, কয়লার রাজস্ব, বালির রাজস্ব কেন পৌঁছাচ্ছে না সরকারের কাছে। সরকারের কাছে যে টাকা আসার কথা সে টাকা দলের লোকেরা খেয়ে নিচ্ছে। কেন্দ্র সরকার রাজ্যকে দেওয়া ২ লক্ষ ২৯ হাজার কোটি টাকার হিসাব দেখাতে পারেনি।” এদিকে বর্ধমান দুর্গাপুরের বিদায়ী সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া আর বর্তমান প্রার্থী দিলীপ ঘোষের তোলা যাবতীয় অভিযোগকে তীব্র কটাক্ষ করে বর্ধমান দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদের সাফাই,”পাঁচ বছরে আহলুওলিয়াকে মানুষ দেখতে পাননি। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ করলে আগে বুলডোজারের সামনে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছিলেন তিনি। আজ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কখনো লাঠি আর ত্রিশূল নিয়ে ঘুরছেন। পাগল হয়ে গেছে ওঁরা।”
কাজের রিপোর্ট কার্ড পেশ করতে গিয়ে বিডিওদের সাথে পঞ্চায়েত প্রধানদের ‘অশুভ আঁতাত’ এর অভিযোগ তুললেন আহলুওয়ালিয়া
RELATED ARTICLES