সংবাদদাতা, বর্ধমান : দীর্ঘদিন ধরে জেল বন্দি থাকা বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে ১০৭ ধারায় প্রসিকিউশন কাটা নিয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কৈফিয়ত তলব করল আদালত। কিভাবে জেল বন্দি দু’জনকে আদালতে পেশ করা হয় তা নিয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। জেল বন্দি থাকা সত্বেও কেন ধৃতদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করে বন্ড দিতে বাধ্য করা হয়েছে সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে হবে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে। সাব-ডিভিশনাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (উত্তর)-কে নির্দেশের কপি দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ। এছাড়াও বর্ধমান থানার তদন্তকারী অফিসারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিচারক। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর জন্য বর্ধমান থানার আইসিকে নিের্দশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সেদিন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে সাব-ডিভিশনার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও নিের্দশ কার্যকর করার ব্যাপারে আইসিকেও বলেছেন বিচারক। রিপোর্ট পেশ না করা হলে আদালত কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক। সোমবার নিের্দশের কপি আইসি ও সাব-ডিভিশনাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি খুনের মামলায় ২০২২ সালের ৩০ জুন অনিরুদ্ধ দত্ত ও তার বাবা ফাল্গুনী দত্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। বর্ধমান থানার সরাইটিকর এলাকায় তাদের বাড়ি। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তারা জেলে রয়েছে। জেলে থাকা অবস্থাতেই তাদের নামে সিআরপিসির ১০৭ ধারায় প্রসিকিউশন কাটে বর্ধমান থানা। তাদের বর্ধমানের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করানোর জন্য নিের্দশ দেওয়া হয়। ১১ মার্চ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দু’জনকে আদালতে হাজির করানোর জন্য নিের্দশ দেন। সেইমতো তাদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করানো হয়। উভয়কে ৫০০ টাকার বন্ড জমা দিতে হয় এক্সিকিউটিভ আদালতে। তাদের খুনের মামলার বিচার চলছে তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে। জেল বন্দি বাবা ও ছেলের প্রসিকিউশন কাটার বিষয়টি বিচারকের নজরে আনেন তাদের আইনজীবী রামগোপাল মজুমদার। এরপরই বর্ধমান থানার তদন্তকারী অফিসারের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন দায়রা বিচারক। সেইমতো ৬ এপ্রিল তদন্তকারী অফিসার আদালতে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, তারা জামিনে ছাড়া পেতে পারে অনুমান করা হয়। লোকসভা ভোটের সময় তারা ছাড়া পেলে এলাকায় অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেকথা মাথায় রেখে প্রসিকিউশন কাটা হয়েছিল। যদিও, সেই ব্যাখ্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারক। কিভাবে বিচার চলাকালীন জেল বন্দি দু’জনের নামে প্রসিকিউশন কাটা হল এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কিসের ভিত্তিতে বন্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিচারক। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন দায়রা বিচারক।
জেল বন্দিদের আদালতে পেশ করা নিয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যা চাইল আদালত
RELATED ARTICLES