প্রণয় রায়,দুর্গাপুরঃ ১৯২২ সালে প্রবাসী বাঙ্গালীদের নিয়ে বেনারসে প্রথম বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯২৩ সালে বেনারসে সেন্ট্রাল হিন্দু বয়েজ স্কুলে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতে সভাপতিত্ব করেন।একদিন এই সংস্থা প্রবাসী বাঙালীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলার বাইরে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালি অতুল প্রসাদ সেন, রাধা কমল মুখার্জি, কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমূখ ব্যক্তিত্বরা এই সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৫৩ সালে এই সংস্থার নাম হয় নিখিল ভারত বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন। সম্ভবত এই সময়েই অতুলপ্রসাদের মোদের গরব মোদের আশা আমরি বাংলা ভাষা এই গানটি এই সংস্থার থিম সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে সারা বিশ্বের বাঙলাভাষীদের প্রাণের সংস্থা হিসাবে পরিগনিত নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন।হিংলিশ ও বাংলিশ ভাষা থেকে বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে এই সংস্থা। দুর্গাপুর শাখা এবছর ৪৩ তম বছরে পদার্পন করল। রবিবার সৃজনীর বিপিন চন্দ্র পাল প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হল দুর্গাপুর শাখার বার্ষিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হয় অতুল প্রসাদ সেনের মোদের গরব মোদের আশা আমরি বাংলা ভাষা এই দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা ইন্দ্রজিত সেনগুপ্ত,সভাপতি মিলনী সেনগুপ্ত,কার্যকরী সভাপতি নিত্যানন্দ ভট্টাচার্য, দুর্গাপুর শাখার সচিব রীতা সাহা দে,কেন্দ্রীয় সাধারণ সচিব অনিল ধর, কিশোর ভট্টাচার্য, সুকমল ঘোষ সহ বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। বিশিষ্ট অতিথি স্বাগত ভাষণ ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত। ভাষণ দেন দুর্গাপুর শাখার কর্মাধ্যক্ষ রীতা সাহা দে। কেন্দ্রীয় সাধারণ সচিব অনিল ধর বলেন,বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নিজের মাতৃভাষার প্রতি উদাসীন। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন সংস্থায় প্রবীন মানুষদের ছড়াছড়ি। তরুণ প্রজন্ম বাংলা ভাষার লালন পালনের প্রতি উদাসীন। তিনি বলেন,বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গুণীজন সম্বর্ধনা দেওয়া হল নাট্য ব্যক্তিত্ব সব্যসাচী বিশ্বাস,গল্পকার শ্যামাপদ রায়কে।প্রতিযোগিতায় সেরার সেরা প্রতিযোগীর পুরস্কার পায় সৃজা তুঙ্গা।অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সঞ্চালক ছিলেন সুকন্ঠের অধিকারী সুকমল ঘোষ। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী, কবি ও সমালোচক শ্যামল জানা। শ্রী জানা বাংলা কাব্য সাহিত্যে বিশ্ব সাহিত্যের প্রভাব বিষয়ে আলোচনা করেন। এই পর্বের অনুষ্ঠান সঞ্চালক ছিলেন অতনু রায় ও এই অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায়। মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির আগে রবীন্দ্রনাথের নগর লক্ষ্মী কবিতাটি আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার কাকলি দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্বে বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং বর্তমান সময়ের প্রাসঙ্গিকতা এই নিয়ে আলোচনা করেন বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। এই পর্বে সঞ্চালক ছিলেন সুকান্ত দেবনাথ ও সভাপতিত্ব করেন রীতা সাহা দে। এরপরের অনুষ্ঠান ছিল অনুগল্প পাঠ এবং দুর্গাপুরের আমন্ত্রিত কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ। সবশেষে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার সাধনা রায়।
নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের দুর্গাপুর শাখার বার্ষিক অনুষ্ঠান
RELATED ARTICLES