বিশেষ প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: নেকড়ের পর এবার বাঘরোলের দেখা মিলল দুর্গাপুরে। পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কলাবাগান বস্তির অদূরে জঙ্গল থেকে উদ্ধার হলো একটি বাঘরোল (ফিশিং ক্যাট)।
বৃহস্পতিবার বেলার দিকে জঙ্গল লাগোয়া রাস্তার ধারে বাঘরোলটিকে দেখতে পান পথচারিরা। অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে বাঘরোলটিকে সামনে থেকে দেখার জন্য এগিয়ে আসেন। অনেকে মোবাইলে প্রাণীটির ছবি তোলেন। খবর পেয়ে বনদপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে প্রায় এক ঘন্টার চেষ্টায় বাঘরোলটিকে খাঁচাবন্দি করেন। বাঘরোলটিকে বন্দি করতে গিয়ে একজন স্থানীয় বাসিন্দা সহ বনদপ্তরের এক কর্মী আহত হন। বাঘরোলটি তাদের কামড়ে ও নখ দিয়ে আচড়ে দেয়। বাঘরোলটির কামড়ে আহত বনকর্মী পঙ্কজ রায় বলেন ‘মনে হচ্ছে বাঘরোলটি চোখে ঠিকমত দেখতে পাচ্ছে না। মানুষ দেখলে সাধারনত পালিয়ে যায় এই প্রাণীটি। আমরা এসে দেখলাম বাঘরোলটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে দীর্ঘক্ষন রাস্তার ধারে বসেছিল। ধরতে গিয়ে আমার হাতে কামড়ে দিয়েছে। স্থানীয় এক যুবকের পায়ে নখ দিয়ে আচড়ে দিয়েছে। বনদপ্তরে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে অসুস্থ কি না। তারপর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ দুর্গাপুর ও আসপাশের এলাকায় বিভিন্ন সময় হায়না, নেকড়ে, সজারু দেখা গেছে। কিন্তু বাঘরোল এর আগে দেখা যায় নি। উদ্ধার হওয়া তো দূর। সচরাচর এই প্রাণীটিকে দেখা যায় না বলে এদিন বাঘরোলটিকে দেখতে কৌতুহলী মানুষের ভীড় জমে যায়। অনেকেই বিড়াল মনে করেছিলেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা রাহুল বাগদী বিড়াল মনে করে ধরতে গিয়ছিলেন। বাঘরোলটি তাঁকে নখ দিয়ে আচড়ে দেয়। রাহুল বলেন ‘অদ্ভুত দেখতে এই প্রানীটিকে আগে কখনও দেখিনি। বনদপ্তরের কর্মীরা আসার পর জানতে পারি এটা বাঘরোল।’ বনদপ্তরের কর্মীরা এদিন বাঘরোলটিকে ধরতে যথেষ্ট বেগ পান। একাধিকবার ধরার পরে জালের ফাঁক দিয়ে পালিয়ে যায় বাঘরোলটি। কিন্তু পালিয়ে বেশিদূরে যায় নি। আসপাশে ঘোরাফেরা করছিল। বাঘরোল সাধারণত জলাজমিতে থাকে। মাছ শিকার করে খায়। যে জায়গায় এদিন বাঘরোলটি উদ্ধার হয়েছে তার আসপাশে বেশ কয়েকটি জলাশয় ও জলা জমি আছে। বনদপ্তরের কর্মীদের অনুমান ওই জলাজমিতে বাঘরোলটি ছিল। কোনও ভাবে জলাজমি ছেড়ে জঙ্গলের দিকে চলে এসেছে। দুর্গাপুরের ডিএফও অনুপম খাঁ বলেন ‘বাঘরোল বা ফিশিংক্যাট দেখা যায় পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, দক্ষিন ২৪ পরগনা এলাকায়। এই প্রাণীটি জলাজমিতে থাকে। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় অতীতে বাঘরোল উদ্ধারের খবর নেই। বাঁকুড়া ও দুর্গাপুর এলাকাগুলি রুক্ষ বলে এইসব জায়গায় বাঘরোল পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে বাসের উপযুক্ত জলাজমি পাওয়ায় এখানেও বংশবিস্তার হচ্ছে।’ এর আগে মাধাইপুরের জঙ্গলে বনদপ্তরের ক্যামেরায় নেকড়ের ছবি ধরা পড়ছে। উপযুক্ত পরিবেশের জন্য এই এলাকায় ক্রমশ বংশবিস্তার করছে নেকড়ে।
হৈ চৈ দুর্গাপুরে,এই প্রথম দেখা মিললো বাঘরোলের
RELATED ARTICLES