নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুর,১৬ জুনঃ সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন দুর্গাপুরের হেভিওয়েট সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার। রবিবার বিকেলে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর অরবিন্দ এভিনিউতে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পঞ্চায়েত গ্রাম উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার,বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের সদ্য বিজয়ী তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ এবং জেলা তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর হাত ধরেই তৃণমূলে যোগদান করলেন পঙ্কজ রায় সরকার। পঙ্কজকে গোলাপ ফুল দিয়ে তৃণমূলে বরণ করে নেন বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের সাংসদ কীর্তি আজাদ। তৃণমূলে যোগদানের পরেই পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতা সীতারাম ইয়েচুরি,প্রকাশ কারাতের সামনে বলেছিলাম,বামের ভোট রামে যাচ্ছে কারণ বামের মধ্যেই রয়েছে রামের নেতা। কিন্তু তারপরেও কোন ব্যবস্থা তো নেওয়ায় হয়নি। এই বামপন্থী দল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নামবে সেটা মেনে নিতে পারিনি”। দলত্যাগের কারন হিসেবে পঙ্কজ আরও বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজে আমি অনুপ্রাণিত। রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ তাই তৃণমূলে যোগদান করেছি”। দুর্গাপুরের বামপন্থী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের এই নেতা আরও বলেছেন,আইএসএফ ও কংগ্রেসের জোটের মাধ্যমেও বামপন্থীদের ওপর আস্থা হারাচ্ছিল মানুষ। সিপিএম নিজেদের গরীব মানুষের দল বলতো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তপশীলি উপজাতিদের ভাতা বাড়িয়ে বারোশো টাকা করলেন তখন সেই ভাতা কেন পনেরশ টাকা করা হচ্ছে না, সেই নিয়ে আওয়াজ না উঠিয়ে আওয়াজ উঠানো হয় ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি হচ্ছে’। তাহলে কিসের গরিব মানুষের দল। এদিকে, তৃণমূলে যোগদানের ঠিক কয়েক ঘন্টা আগে রানীগঞ্জের সিপিএম কার্যালয়ে দল বিরোধী কাজের জন্য পঙ্কজকে যিনি বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করেছিলেন সেই সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জীর সাথে দিলীপ ঘোষের যোগ আছে বলেও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন পঙ্কজ। রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন,”মুখ্যমন্ত্রীর কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন পঙ্কজবাবুর পাশাপাশি ১২০০ জন সিপিএম শ্রমিক সংগঠনের কর্মী সমর্থক। বিজেপির অনেক বড় বড় নেতা, সিপিএমের বড় বড় নেতারা তৃণমূলে আসছেন। দল যাকে যাকে বলছে তাকে তাকে আমরা দলে নিচ্ছি।” পঙ্কজ রায় সরকারকে কি দলে বিশেষ কোনো পদ দেওয়া হবে? জবাবে অরূপ বিশ্বাস বলেন,দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার সিপিএম শ্রমিক সংগঠন সিটুর সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের শুরুটা হয়েছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই থেকে। তারপর যুব সংগঠন তারপর জেলা এবং রাজ্যস্তরেও জায়গা করে নিয়েছিলেন। একসময় সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য পদ পান। তার আগেই তিনি ইসিএলের চাকরিও ছেড়ে দেন। বামপন্থী রাজনীতি ছাড়লেও এবার তৃণমূলে নতুন রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করতে চলেছেন পঙ্কজ রায় সরকার। সামনেই দুর্গাপুর পুরসভার নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে পঙ্কজকে কিভাবে তৃণমূল ব্যবহার করে সেটাই এখন দেখার।
গোলাপ দিয়ে সিপিএম নেতা পঙ্কজকে তৃণমূলে বরণ করে নিলেন সাংসদ কীর্তি আজাদ
RELATED ARTICLES