বিশেষ প্রতিনিধি,দুর্গাপুরঃ পুজোর আর মাত্র দু’মাস বাকি। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। অধিকাংশ জায়গায় খুটি পুজো হয়ে গেছে। উদ্যোক্তারা পুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। সেখানে ডিপিএল টাউনশিপে বি-জোন আদিবেদী পুজো কমিটির সদস্যরা কার্যত হাত গুটিয়ে বসে আছেন। প্রায় ৬০ বছরের বেশি পুরনো এই পুজো এবার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ গত বছর পুজো করার পর ডেকরেটার, মৃৎশিল্পী, লাইট ও সাউন্ড, পুরোহিত, ছাপাখানা এদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হয় নি। একাধিকবার তাগাদা দিয়েও বকেয়া টাকা না পাওয়ায় ডেকেরেটর অ্যাসোসিয়েশন বি-জোন আদিবেদী পুজো কমিটিকে ব্ল্যাকলিস্ট করে দিয়েছে। ফলে কোনও ডেকরেটার সংস্থা এখানে মন্ডপ তৈরি করবে না। কোনও মৃৎশিল্পীও ঠাকুর তৈরি করতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতি পুজো করা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ডিপিএল টাউনশিপে তো বটেই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বি-জোন আদিবেদী পুজোর বেশ নাম ডাক ছিল। প্রতিবছর নিত্য নতুন থিম, আলোক সজ্জা দেখার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ত। প্রতিদিন সন্ধায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আতসবাজীর প্রদর্শনী জমজমাট থাকত পুজো প্রাঙ্গন। এত বড় একটা পুজোর হঠাৎ এমন হাল কেন ? পুজো কমিটির এক সদস্য সুনীল মন্ডল বলেন ‘আমাদের পুজো কমিটির সেক্রেটারি উমাপদ দাস এসবের জন্য দায়ী। পুজো শেষে কাউকে বকেয়া টাকা দেন নি তিনি। স্পনসর, চাঁদা, রাজ্য সরকারের পুজোর অনুদানের টাকা সব নিজের কাছে রাখতেন। সেই টাকা তিনি কি করেছেন জানি না। হিসেব দিতে পারছেন না। এখন তো তাঁকে এলাকায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। শুনেছি বাজারে অনেক টাকা দেনা করেছেন তিনি। পুজোর টাকা শুধু নয়, রাজ্য সরকার অনুদানের কয়েক লক্ষ টাকার হিসেব দেন নি তিনি। ডেকরেটার, মৃৎশিল্পী কেউ কাজ করতে চাইছে না। পরিস্থিতি যা তাতে পুজো বন্ধ হয়ে যাবে।’ গত বছর বি-জোন আদিবেদীতে একটি বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে মন্ডপ তৈরি হয়েছিল। পলাশডিহার একটি ডেকরেটার সংস্থা মন্ডপ তৈরি করেছিল। ডেকরেটার সংস্থার কর্ণধার বুদ্ধদেব কর্মকার বলেন ‘দুর্গাপুজো ও কালিপুজো মন্ডপ সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও ভোগের বাসনপত্র সব মিলিয়ে ৬ লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছিল। মোট ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিল। এখনও ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বকেয়া আছে।’ ডেকরেটারস অ্যাসোসিয়েশনের সহ সম্পাদক অয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেকবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উমাপদ দাস টাকা দেন নি। এখন তো ফোন ধরেন না। বাড়িতেও থাকেন না। বাধ্য হয়ে ডেকরেটার অ্যাসোসিয়েশন বি-জোন আদিবেদী পুজো কমিটিকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে। দুর্গাপুরের কোনও ডেকরেটার সংস্থা মন্ডপ তৈরি করবে না। উদ্যোক্তারা যদি বাইরের কোনও ডেকরেটার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাহলে আগে বকেয়া মেটাতে হবে। তারপর মন্ডপ তৈরি করবে।’মৃৎশিল্পী অরুণ পাল বলেন ‘দুর্গা, লক্ষী ও কালি ঠাকুর মিলিয়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় আমার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন উমাপদ দাস। তারপর আর কোনও টাকা দেন নি। ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বকেয়া আছে। ফোনে পাওয়া যায় না । এখনতো বাড়িতেও পাওয়া যায় না তাঁকে।’ পুজো হবে না শুনে হতাশ স্থানীয় বাসিন্দারা। যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সেই উমাপদ দাসকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন নট রিচেবল অবস্থায় রয়েছে। মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর দেন নি।
মন্ডপ-প্রতিমার টাকা বকেয়া,ডিপিএলের আদিবেদী দুর্গাপুজো আদৌ হবে?
RELATED ARTICLES