দুর্গাপুর,১২ আগস্টঃ হিন্দু ধর্মে শ্রাবণ মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই মাসটিকে সম্পূর্ণরূপে ভগবান শিবের জন্য উৎসর্গ করা হয়। শ্রাবণ মাসে ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পুজো করলে মনোস্কামনা পূরণ হয়,এমনই ধারনা প্রচলিত আছে। তাই,এবারও দেখা গেল সারা রাজ্যে গোটা শ্রাবণ মাস ধরেই শিবমন্দিরগুলিতে ভক্তদের ঢল। আজ (১২ জুলাই) ছিল শ্রাবণের শেষ সোমবার। এই দিন শিবের মাথায় জল ঢেলে পুজো করলে সারা বছর সুখে ভরাবেন মহাদেব। শিব সন্তুষ্ট হন এবং ভক্তদের জীবনে সুখ,সমৃদ্ধি,টাকা-পয়সা এবং প্রেম আনেন এই বিশ্বাস থেকেই বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে দুর্গাপুরের কাঁকসা ব্লকের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিবভক্তের দল শিবের মাথায় জল ঢালতে বের হয়। তবে,হিন্দু ধর্মের এই বিশেষ দিনে মানবতা ও ধর্মীয় সংহতির এক অসাধারন ছবি দেখা গেল মলানদিঘি এলাকায়। হিন্দুরা শিবের মাথায় জল ঢালতে বাঁকে করে জল নিয়ে যাচ্ছে আর পথে শিব ভক্তদের সাময়িক তৃষ্ণা মেটাতে ঠান্ডা পানীয় খাওয়াচ্ছে মুসলিম যুবকরা। রাজ্যের ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেল কাঁকসার মলানদিঘীতে। শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার ভোর থেকেই কাঁকসার শিবপুরের অজয় নদ থেকে হাজার হাজার শিব ভক্ত কলসিতে জল ভরে বাঁকে করে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ ১৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে রাজা বল্লাল সেনের আড়ার রাঢ়েশ্বর শিব মন্দিরের উদ্দেশ্যে আবার কেউ মলানদিঘীর শিব মন্দিরে যান। প্রচন্ড গরমে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে বহু ভক্ত। যাত্রাপথে তাঁদের তৃষ্ণা নিবারণ করাতে দেখা গেল আনোয়ার,শাহজাহান আর সুরজদের। আনোয়ার মিদ্দা বলেন,”আমরা প্রতিবছরই শ্রাবণ মাসের সোমবার গুলিতে শিব ভক্তদের ঠান্ডা পানীয় খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি। আজও আকন্দরার মুসলিম পাড়ার যুবকরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমাদের এই উদ্যোগ দেখে এগিয়ে এসেছিল মলানদিঘী অটো স্ট্যান্ডের বেশ কিছু হিন্দু যুবকও। আমরা একত্রিত হয়ে উৎসবের আকারে দিনটি পালন করলাম।” এলাকার যুবক অনন্তরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”আমিও সকাল বেলায় যাচ্ছিলাম শিবের মাথায় জল ঢালতে। আমাকেও একদল মুসলিম যুবক ঠান্ডা পানীয় খাওয়ালো। খুবই ভালো লাগলো। এমন সম্প্রীতির মেলবন্ধন আগে কখনো দেখিনি। এভাবেই তো জাতি ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের পাশে থাকা দরকার।” যথার্থই বলেছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান, কবির সেই লাইনই মিশে গেল শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবারে। কয়েক মাস আগে দুর্গাপুরের ইস্কনের রথের প্যান্ডেলে বকরি ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছিল ইস্কন কর্তৃপক্ষ। দুই সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় ভেসেছিল দুর্গাপুর। এবার দেখা গেল মন্দিরের উদ্দেশ্যে হেঁটে চলা শিবভক্ত হিন্দু পূণ্যার্থীদের পিপাসা মেটানোর ব্যবস্থা করল মুসলিম যুবকরা।
শিবভক্ত হিন্দু পূণ্যার্থীদের পিপাসা মেটানোর ব্যবস্থা করল মুসলিম যুবকরা
RELATED ARTICLES