Tuesday, October 15, 2024
Google search engine
Homeদক্ষিণবঙ্গমোহন্ত অস্থল ভাঙ্গা যাবে না: হাইকোর্ট

মোহন্ত অস্থল ভাঙ্গা যাবে না: হাইকোর্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান : বর্ধমান শহরের রাজগঞ্জে মোহন্ত অস্থল ভেঙে হেরিটেজ ধ্বংস করা নিয়ে কড়া নির্দেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। ঘটনাস্থল সরজমিনে পরিদর্শন করে এব্যাপারে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়। সেই সময় পুরসভা, হেরিটেজ কমিশন ও মামলাকারীকেও হাজির থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরসভা এবং হেরিটেজ কমিশনকেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিশদে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। কিভাবে হেরিটেজ সম্পদকে সংরক্ষণ করা যায় রিপোর্টে তা যেন উল্লেখ থাকে সেকথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। যাতে হেরিটেজ কাঠামো ধ্বংস না করা হয় সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারির জন্য জেলার পুলিস সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। যাতে কোনও ভাবেই হেরিটেজ নির্মাণ ধ্বংস না করা হয় তা পুলিস সুপারকে দেখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে পুলিস পিকেট বসানোর জন্যও এসপিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। হাই কোর্টের নির্দেশের বিষয়টি চাউর হওয়ার পরই উল্লসিত শহরবাসী। হেরিটেজ ধ্বংস নিয়ে আড়ালে-আবডালে সমালোচনায় সরব হলেও শাসকদলের রোষানলে পড়ার ভয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। হাই কোর্টের নির্দেশে পর আশার আলো দেখছেন তাঁরা। হাইকোর্ট বিশেষ করে হেরিটেজ কমিশনকে মন্দির সংরক্ষণের বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করতে বলায় খুশি তাঁরা।
শহরের একেবারে পশ্চিম এলাকায় রাজগঞ্জ মহল্লায় অবস্থিত মোহন্ত অস্থল। এটি নিম্বার্গ সম্প্রদায়ভুক্ত বৈষ্ণবীয় মঠ। রাজা কীর্তি চাঁদ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে রাধা দামোদরের বিগ্রহ আছে। মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটি কাহিনী রয়েছে। রাজ বংশানুচরিত অনুযায়ী, যখন কীর্তি চাঁদ বিষ্ণু পুরাধিপতির সঙ্গে সংগ্রামাের্থ গমন করেন সেই সময় কাঞ্চননগরের বারদ্বারী নামের আমবাগানে এক সন্ন্যাসী রঘুনাথ জিউয়ের বিগ্রহ নিয়ে বসেছিলেন। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় কীর্তি চাঁদ ভক্তি সহকারে রঘুনাথ জিউ ও সন্ন্যাসীকে যাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করেন। তাতে তুষ্ট হয়ে যুদ্ধে তাঁর জয় হবে বলে সন্ন্যাসী তাঁকে আশীর্বাদ করেন। কীর্তি চাঁদ যুদ্ধে জয়লাভ করলে রঘুনাথ জিউ ও সাধু-সন্ন্যাসীদের জন্য সম্পত্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। যুদ্ধে জেতার পর ফিরে এসে রাজগঞ্জে উৎকৃষ্ট মন্দির ও অতিথিদের জন্য নিষ্কর মহল ও দেবোত্তর ভূমি দান করেন।
কয়েকমাস আগে সেই মন্দির ভাঙাভাঙি শুরু হয়। সেখানে রয়েছে হোমিওপ্যাথি কলেজ। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাঙাভাঙিতে বাধা দেন। ভাঙাভাঙিতে জড়িয়ে পড়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ডের নাম। সেই বোর্ডের পিছনে শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার মদত থাকায় প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ জেলাশাসক, পুরসভা ও হেরিটেজ কমিশনকে হেরিটেজ ধ্বংস করা নিয়ে নালিশ জানায়। কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে প্রশাসন নীরব থাকে। এরপরই কলেজ কর্তৃপক্ষ হেরিটেজ ধ্বংস করা নিয়ে হাই কোর্টে মামলা করে। কলেজ কর্তৃপক্ষের আইনজীবী উত্তীয় রায় ও অর্ণব মণ্ডল বলেন, হেরিটেজ ধ্বংস করা নিয়ে হাইকোর্ট অত্যন্ত কড়া মনোভাব নিয়েছে। প্রশাসনের উদাসীন মনোভাবের কারণে হেরিটেজ ধ্বংস করে সেখানে নির্মাণকাজ চলছে। যদিও মন্দিরটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল বলে সেটি মেরামত করা হচ্ছে বলে আদালতে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে সওয়াল করা হয়। হেরিটেজ কমিশন, পুরসভা এবং রাজ্যের তরফে আইনজীবীরা ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। হেরিটেজ কমিশন, জেলাশাসক ও পুরসভাকে হেরিটেজ ভবন ভাঙা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে বলেছে হাইকোর্ট।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments