নিজস্ব প্রতিনিধি,বাঁকুড়াঃ কৃত্রিম কোনো রঙে নয়, প্রাকৃতিক বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ধানের খড়ে যে রঙ ধরে সেই রঙকে কাজে লাগিয়েই খড়ের দুর্গা প্রতিমা ও মন্ডপের অলঙ্করণ তৈরী করে তাক লাগাচ্ছেন বাঁকুড়ার মালিয়াড়া গ্রামের শিল্পী সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র। একেবারে ভিন্ন ধরনের এই শিল্প এবার স্থান পাবে বাঁকুড়া শহরের প্রাচীন একটি দুর্গা মন্ডপে। শিল্পীর আশা দুর্গাপুর, কলকাতা, মুম্বাই, রাঁচির পর তাঁর এই ভিন্নধর্মী শিল্পকর্ম নজর কাড়বে বাঁকুড়ার পুজো মন্ডপেও। নিজের মনের খেয়ালে একসময় ছবি আঁকতে শিখেছিলেন মালিয়াড়ার সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র। বছর চল্লিশ আগে তাঁর হাতেই জন্ম নেয় খড় দিয়ে তৈরী বিশেষ একধরনের শিল্পকলা। নিরন্তর গবেষণা, লাগাতার পর্যবেক্ষণ ও কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে একেবারে আনকোরা সেই শিল্পকে নিজের করায়ত্ব করেন এই শিল্পী। এই শিল্পের মূল বৈশিষ্ঠ শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে কোনো রঙের ব্যবহার নেই। প্রজাতি ভেদে ও জমির মাটি ভেদে ধানের খড়ের রঙ আলাদা আলাদা হয়। সেই খড় বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে আলাদা আলাদা রঙ ধারণ করে। নানা রঙ বেরঙের সেই খড় সংগ্রহ করে তা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় আঁশ। সেই আঁশকে ইস্ত্রী করে সোজা করে নেওয়া হয়। এরপর প্রয়োজনমতো তা চিটিয়ে দেওয়া হয় কাগজে। কাঠের গুঁড়ো দিয়ে তৈরী বিশেষ একধরনের মন্ড দিয়ে প্রতিমা গড়ে তার উপর একে একে চিটিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন রঙের এই খড়ের আবরণ। আর তাতেই প্রাণ পায় দূর্গামুর্তি। বছরের পর বছর ধরে মালিয়াড়া গ্রামে নিজের একচিলতে ওয়ার্কশপে সেই শিল্পেরই চর্চা করে এসেছেন শিল্পি সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র। তাঁর এই শিল্প ইতিমধ্যেই রীতিমত প্রশংসা কুড়িয়েছে দুর্গাপুর, কলকাতা, মুম্বাই, রাঁচি সহ ধানবাদ বিভিন্ন শহরের পুজো মন্ডপে। এবার বরাত মিলেছে বাঁকুড়া শহরের পাঠক পাড়া সর্বজনীনে। প্রতিমা থেকে মন্ডপের অলঙ্করণ তৈরীতে এখন দম ফেলার ফুরসৎ নেই শিল্পী সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র ও তাঁর সাকরেদদের। রাতদিন জেগে চলছে প্রতিমা ও মন্ডপের অলঙ্করণ তৈরীর কাজ। শিল্পীর দাবী এবারের কাজ হয়েছে অত্যন্ত নিখুঁত। গত চার মাস ধরে তৈরী এই শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করে রাখতে চান শিল্পী। পাশাপাশি তাঁর ইচ্ছে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসুক এই শিল্পের চর্চার প্রসারে।
প্রাকৃতিক কারনে খড়ে ফুটে ওঠা রঙ কাজে লাগিয়ে প্রতিমা ও মন্ডপের অলঙ্করণ বানিয়ে তাক লাগাচ্ছেন বাঁকুড়ার শিল্পী সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র
RELATED ARTICLES