প্রণয় রায়,দুর্গাপুরঃ ২৫ শে বৈশাখ মানেই রবীন্দ্রময় বিশ্ব বাংলা। ব্যতিক্রম নয় শিল্প শহর দুর্গাপুরও। খুব ভোর থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় রবীন্দ্র বন্দনা। চির নতুনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ। এভাবেই প্রতিটি ২৫ শে বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ আমাদের হৃদয়ের দরজায় এসে এক অতি পরিচিত জনের মত যেন বলেন- আজ মম জন্মদিন। এদিন সেই বিশ্বকবির ১৬৪ তম জন্মদিন। সারাদিন রবীন্দ্রসাগরে আমাদের অবগাহন করার দিন। এদিন সাত সকালে সিটি সেন্টারে কথা ও কবিতা সংস্থার শিশু কিশোর ও বড় সদস্যরা প্রতি বছরের মতো এ রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি নিয়ে সুসজ্জিত প্রভাত ফেরি করে। শিশুরা সমবেত আবৃত্তি করছে আর বড়রা গাইছেন চির নূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ গান। সংস্থার কর্ণধার মিতা চৌধুরী মিষ্টি হেসে সকলকে রবীন্দ্রময় সকালে শুভেচ্ছা জানান। এরপর এডিসন রোড মেজর পার্কে ছিল নিখিল ভারত বঙ্গ সংস্কৃতির সম্মেলনের দুর্গাপুর শাখার রবীন্দ্র বন্দনা। পার্কের মধ্যে অনুষ্ঠান মঞ্চের পাশেই রবীন্দ্রনাথের বিরাট প্রতিকৃতি। রবীন্দ্রনাথের ছবিতে মাল্যদানও পুষ্পার্ঘ অর্পণের পর দুর্গাপুর শাখার শিল্পীদের রবীন্দ্র গীতি আলেখ্যটি পরিবেশনার গুণে জমে উঠেছিল। দীনবন্ধু বালিয়ালের ভরাট কন্ঠে ‘আমি তোমায় শুনিয়েছিলাম যত গান’ শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। হৃদয় সাঁই মনগ্রাহী আবৃত্তি পরিবেশনা করেন। ডাঃ শর্মিষ্ঠা দাসের ভাষ্যপাঠের সাথে চৈতী গাঙ্গুলীর রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুষ্ঠানটিকে এক বিশেষ মাত্রা দেয়। এছাড়াও ইস্পাতনগরীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারভাবে সঞ্চালনা করেন কাকলী দাসগুপ্ত,নন্দিতা মন্ডল ও সমীর দাস। এডিসন পার্ক জুড়ে ঘন গাছগাছালির স্নিগ্ধ বাতাস মনে করিয়ে দিচ্ছিল এ যেন এক শান্তিনিকেতনের শান্ত পরিবেশে রবি কবির জন্মদিন পালিত হচ্ছে। আর গাছপালার ফাঁকে প্রভাত রবি উঁকি দিয়ে যেন বলছিল তোমাদের এই রবি বন্দনা আমার উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হোক। হচ্ছিলও তাই। সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে নেপথ্যে থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সার্থক করে তোলেন শহরের বিশিষ্ট কবি স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায় ও নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের প্রাণপুরুষ মোহিত গাঙ্গুলী। এরপর দুর্গাপুর ইস্পাত মেন হাসপাতালের ফার্মাসি বিভাগে ঢুকতেই দেখা গেল ফার্মাসিস্ট কবি জয়ন্ত দত্ত ডেকে বলল ঠাকুরের ছবিতে একটু ফুল দিন। এরপর ফিজিওথেরাপি বিভাগে। এখানেও তপন বাদ্যকর তার অফিস টেবিলে ফুলে ফুলে সাজানো রবীন্দ্রনাথের ছবিকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করতে বললেন। দেখলাম অনেকেই সকাল থেকে ছবিতে ফুল দিয়েছেন। এ ধরণের একক প্রচেষ্টায় রবীন্দ্র বন্দনা এই প্রথম দেখলাম। এদিন অপরাহ্নে হোস্টেল এভিনিউ রোটারির কাছে রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশে সাহিত্য আল্পনা রবীন্দ্র জয়ন্তীর আয়োজন করেছিল। শহরের আরও নানা সংস্থা ও সংগঠনের তরফেও পালন করা হয় রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠান।