কথা নিউজ সার্ভিস
দুর্গাপুরঃ সোনাইচন্ডিপুর! মিষ্টি একটি নাম। নদীর চরে অনেকেরই স্থায়ী ঠিকানা এই সোনার গ্রাম,যার জীবন যন্ত্রণার কূল কিনারা নেই এতো বছরেও। প্রতিবারের মত এবারও সোনাইচন্ডীপুর গ্রামে রঙহীন ভোট। প্রচার তো দূর অস্ত, কোনো দেওয়ালেই প্রতীক,কার্টুন নেই কোনও রাজনৈতিক দলেরই। গ্রামজুড়ে নেই কোনও দলের ঝান্ডাও। প্রার্থীরাও আসেন না প্রচারে। তা সত্ত্বেও আরও একটা লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেবে সোনাইচন্ডীপুর। যদি কিছুটা অন্তত উন্নয়ন হয় – এই আশা নিয়ে ফের ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন বাসিন্দারা। দামোদর নদের চরে আগাছায় মুখ ঢেকে যেন লুকিয়ে আছে এই জনপদ। ভৌগলিক দিক থেকে সোনাইচন্ডীপুর গ্রামের অবস্থান শহর দুর্গাপুরের বুকে। কিন্তু, সরকারি নথিতে এই গ্রামের অস্তিত্ব বাঁকুড়া লোকসভার মেজিয়া থানার বানজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। সাকুল্যে ৪৫ টি ঘর আর বাসিন্দা প্রায় ২৫০ জন। এদের ভেতর ভোটার ৮০ জন। বাসিন্দারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তু। তবে, প্রত্যেকেরই ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ যাবতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে বহুদিন যাবৎ। অর্থাৎ, এঁরা দেশের বৈধ ভোটার। চাষ করে দিন গুজরান করেন ওই পল্লীর বাসিন্দারা। সেখানের অধিকাংশ বাড়িরই দেওয়াল পাটকাঠির। ছাদ টালি অথবা টিনের। ইটের দেওয়াল হাতে গোনা। গ্রামে পাকা রাস্তা নেই। আলো নেই, পরিশ্রুত নল বাহিত পানীয় জল নেই। শিশু শিক্ষার স্কুল নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। জলের ছলাত ছলাতটাই বেঁচে থাকার উৎসাহ আর বাদবাকি শুধু নেই আর নেই এই সোনাই পাড়ায়! অভাব অভিযোগের কথা যাদের শোনার কথা সেই জনপ্রতিনিধিরা কখনোই সেখানে আসেননি।এমনকি, নির্বাচনের সময় প্রচারেও তারা আসেন না, ভোট যে মোটে ৮০টি! প্রার্থীকে কোনোদিন না দেখে শুধু মাত্র তার নাম শুনেই ভোট দেন সোনাইচন্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তাই, এখানে ভোট এক্কেবারে সাদামাঠা, রঙহীন। প্রার্থীরা যাতে গ্রামে প্রচারে আসেন তারজন্য কম চেষ্টা করেন নি। সে ডান হোক বা বাম। মেজিয়াতে গিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন বাসিন্দারা, নেমন্তন্ন করে প্রচারে যেতে আবদারও কম করেননি। কিন্তু, নৌকায় চড়ে দামোদর পার করে আগছার জঙ্গল সরিয়ে কোনও দলের প্রার্থীই ওই গ্রামে আসতেই চান না। এই নিয়ে বাসিন্দাদের আক্ষেপও কম নেই। কিন্তু তাদের কি আর করার আছে! ছোট্ট আক্ষেপ পাড়া জুড়ে। বাড়ির দাওয়ায় বসে সেই আক্ষেপের কথা বলছিলেন বাসিন্দা প্রভাস দাস। বলেন, “প্রার্থীরা এলে তাদের গ্রামটা ঘুরিয়ে একটু দেখাতাম। অভাব অভিযোগের কথা বলতাম। কিন্তু কাকে বলব? প্রার্থীরা তো আর আসেনই না!” তাঁর কথায়, “বাঁকুড়ায় গিয়ে অনেক চেষ্টা করে গ্রামে বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থা করেছি। বিদ্যুতের পোল পড়েছে এখন।” গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা নারায়ণ দাস বললেন “গ্রামে পাকা রাস্তা নেই। বর্ষায় কাদার মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। একটু মোরাম ফেলে দিলে কাদা কম হয়। কিন্তু, মোরাম ফেলার জন্য কাকে বলব? জনপ্রতিনিধিরা কেউই এখানে আসেন না। অথচ আমরা পঞ্চায়েত, বিধানসভা ও লোকসভার ভোট বরাবর দিই।” প্রচারে না এলেও দামোদর পারে সোনাইচন্ডীপুর গ্রামের কথা কিন্তু শুনেছেন ভোটপ্রার্থীরা। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমুল কংগ্রেসের প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী বলেন ‘গ্রামের নাম শুনেছি আমি। বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে গ্রামবাসীরা একবার এসেছিল আমার কাছে।” তিনি বলেন, “এবার নির্বাচনী প্রচারে আমি যেতে পারব না। তবে দলের প্রতিনিধিরা যাবে।” বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার বলেন,”বহুদিন আগে একবার সোনাইচন্ডীপুর গ্রামে যাই। যদি সম্ভব হয় এবার প্রচারে যাব।” তিনি সাংসদ,এলাকায় যাবার জন্যও তার কাছে দরবার করেও লাভ হয়নি,বলে বাসিন্দাদের আক্ষেপ। আর, সিপিএম প্রার্থী নীলাঞ্জন দাসগুপ্ত বলেন,”সোনাইচন্ডীপুর গ্রামে প্রচারের কোনও কর্মসূচি তৈরি হয় নি। হলে প্রচারে যাব।”