বিশেষ প্রতিনিধি,দুর্গাপুরঃ দুর্গাপুর ওমেন্স কলেজের হোস্টেল তৈরিতে আর্থিক অনিয়মে দুর্গাপুর পুরসভার এক আধিকারিক সহ কলেজের প্রাক্তন এক অধ্যক্ষার নাম জড়াল। অভিযোগ সরকারি সংস্থার বদলে একজন ঠিকাদারকে অবৈধ ভাবে হোস্টেল তৈরির বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ অবধি হোস্টেল তৈরির কাজ সম্পূর্ন হয় নি। অথচ হোস্টেলের অভাবে বাইরের ছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না। তাই তড়িঘড়ি পরিত্যক্ত কলেজ স্টাফ কোয়ার্টার মেরামত করে হোস্টেল পরিণত করা হয়েছে। সম্প্রতি, সেই হোস্টেলের উদ্বোধন করেন মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ও পুরসভার মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়।গত কয়েক বছর আগে হোস্টেল তৈরির জন্য ইউজিসি থেকে প্রায় কুড়ি লাখ টাকার একটি ফান্ড আসে। কোনও সরকারি সংস্থাকে দিয়ে হোস্টেল তৈরির কথা বলা হয়েছিল। অভিযোগ সরকারি সংস্থার বদলে দুর্গাপুর পুরসভার এক আধিকারিকের ঘনিষ্ট একজন ঠিকাদারকে অবৈধ ভাবে হোস্টেল তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাটি জানার পরেও তৎকালিন অধ্যক্ষা কোনও ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি। ঘটনাটি জানাজানি হতেই কলেজের অধ্যাপকদের কয়েকজন প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে হোস্টেল ভবনটি সম্পূর্ন তৈরি করা যায় নি। পরবর্তী সময় হোস্টেল নির্মাণের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায় ইউজিসি। সরকারি সংস্থার বদলে কেন একজন ঠিকাদারকে হোস্টেল তৈরির বরাত দেওয়া হয় তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেন নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি যা তাতে আগামী দিনে দুর্গাপুর ওমেন্স কলেজকে ইউজিসি ফান্ড নাও দিতে পারে। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষা মহানন্দা কাঞ্জিলাল অনিয়মের কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন ‘আমি গত জুলাই মাসে এই কলেজে যোগ দিয়েছে। বিশদে কিছু বলতে পারব না। তবে কাজটা যাতে আটকে না যায় রেক্টিফাই করে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই চেষ্টা করব।’ আর্থিক অনিয়মে যাদের নাম জড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কি তদন্ত হবে ? এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যক্ষা বলেন ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কলেজের পরিচালন পর্ষদ।’ কলেজের পরিচালন পর্ষদের সভাপতি তথা দুর্গাপুর পুরসভার মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় অনিয়মের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন ‘একজন ঠিকাদারকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই সময় আমি পদে ছিলাম না। কিছুদিন আগে সভাপতি পদে যোগ দিয়েছি। সম্পূর্ন বিষয়টা না জেনে কিছু বলব না।’ প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও আর্থিক অনিয়মের জন্য প্রাক্তন এক অধ্যাক্ষার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কলেজের শিক্ষিক শিক্ষিকাদের একাংশ। তাঁরা বলেন ‘প্রাক্তন ওই অধ্যক্ষা কলেজের সম্পত্তিকে নিজের মনে করতেন। সরকারি টাকার মিস ইউস করছেন। ফলে আজ অবধি দুর্গাপুর ইউমেন্স কলেজের হোস্টেল তৈরি হয় নি।’ এদিকে যে হোস্টেলটি উদ্বোধন করা হয়েছে সেই ভবনটি প্রায় তিরিশ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল কলেজের স্টাফদের থাকার জন্য। কিন্তু এই ভবনটিও সম্পূর্ন করা যায় নি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুশা) প্রকল্পের টাকায় এডিডিএ ভবনটি মেরামত করে হোস্টেলে পরিণত করেছে। এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত এডিডিএর এক আধিকারিক বলেন ‘জরাজীর্ন অবস্থায় পড়েছিল ভবনটি। ভবনের পিলার থেকে কংক্রিট ক্ষয়ে রড বেরিয়ে গিয়েছিল। এনআইটি থেকে দু’জন ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে এসে দেখানে হয়। তাঁরা পর্যবেক্ষন করে ছাড়পত্র দেওয়ার পর মেরামতের কাজ শুরু করা হয়।’ আপাতত তিরিশ জন ছাত্রী এখানে থাকতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
দুর্গাপুর ওমেন্স কলেজের হোস্টেল তৈরিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ
RELATED ARTICLES