জয় লাহা ও শেখ জয়উদ্দিন,দুর্গাপুরঃ যুদ্ধ নয়ই। শুধুই শান্তি,শুধুই আনন্দ। মহাসপ্তমীর সকাল সকাল ঝলমলে রোদ পাড়ায় পাড়ায়,প্যান্ডেলে,বাড়ীতে ছড়িয়ে দিল এই আনন্দ উচ্ছাসের সবটুকু। নামেই সপ্তমী,যেন মহানবমীর বাঁধভাঙা ভিড় শহর দুর্গাপুরের সর্বত্রই। বি-জোনের মার্কনী দক্ষিণপল্লি,বেনাচিতির অগ্রণী,বিধাননগরের স্যান্টোস মাঠ থেকে বাইক মিছিল সটান হানা দিচ্ছে সিটি সেন্টারের চতুরঙ্গ ময়দানে। যুবক যুবতীদের জবরদস্ত জমায়েত। গোটা শহরের চনমনে ভিড়,কাতারে কাতারে,এক নিমেষে সোজা চতুরঙ্গে। “ হবেই তো। এই ছত্রিশ বছরে আমাদের পাড়ার এই পুজোটা সবার কাছে দারুন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। শহরে নিশ্চয় অনেক বড় বড় বাজেটের পুজো হয়,কিন্তু,চতুরঙ্গ মাঠে আসাটা একটা আলাদা আনন্দের ব্যাপার। এত খোলামেলা জায়গা স্যান্টোস ছাড়া আর কোথায়?” বললেন,সমাজকর্মী পরিমল অগস্তি। অগস্তি নিজেও টানা দু’বছর চতুরঙ্গের পুজোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সামলে ছিলেন। পুজোর মাঠটিতে মাটি ভরাট করে,খানাখন্দ বুজিয়ে ২০১৩ সালে সমতল করা হয় এই অগস্তির উদ্যোগেই। এই বহুল চর্চিত আকর্ষণীয় পুজোটির প্রতিমা আসে কলেজ মালিক শিউলি মুখোপাধ্যায় আর অনুপম মুখোপাধ্যায়ের পরিবার থেকে। বরাবর। এবারও তার ছেদ পড়েনি। সিটি সেন্টারেরই আরেকটি জনপ্রিয় পুজো স্থানীয় বেঙ্গল-অম্বুজা কলোনীর উর্বশী সর্বজনীন। সেই পুজো দেখতেও মানুষের ঢল অবিরাম। কমিটির সভাপতি,সন্দীপ দে বললেন, “শুরু থেকেই উর্বশীর পুজো নজরকাড়া। অন্যান্য পুজোর চেয়ে সৃষ্টি,সৃজনশীলতায় উর্বশীর আলাদা মর্য্যাদা রয়েছে”। প্রায় ৫০ বছর ধরে শহর দুর্গাপুরের আলাদা একটা টান ভিড়িঙ্গী মোড়ের নবারুণ ক্লাবের পুজো। এই পুজোর বাড়তি আকর্ষণ মেলা। যারা এ শহরে পঞ্চাশের কোঠায়,নবারুণের মেলা দেখেননি – এমন মানুষ মেলা ভার। তবে, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার প্রস্তাবিত সম্প্রসারন প্রকল্পের দরুন আগামী দিনে এই পুজো,মেলার জায়গা অবশিষ্ট থাকবে কিনা, তা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ ক্লাব কর্তাদের। ক্লাব সভাপতি,প্রাক্তন মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “বহু মানুষের আবেগ,ভালোবাসা আর ঐতিহ্যের বন্ধন রয়েছে আমাদের এই নবারুণের পুজোর সাথে। আশাকরি,সবটারই একটা সুষ্ঠু সমাধান সূত্র পাওয়া যাব”। আর অগ্রণী সংস্কৃতিক পরিষদের পুজো? বেনাচিতি বাজারের কেন্দ্রস্থলেই জমজমাট এই পুজো। অগ্রণী’র পুজোর আকর্ষণটাই আলাদা তার সৃজনশীলতার দরুন। বরাবরই আলাদা রকম আকর্ষণীয় কিছু একটা করার নেশা গোটা অগ্রণীর শরীর জুড়েই। দুর্গাপুরের বাইরে থেকে পুজো দেখতে আসা মানুষজন নবারুণের পাশাপাশি অগ্রণীর প্যান্ডেলে হাতজোড় করে দাঁড়াবেনই। ক্লাবের পূজা কমিটির সম্পাদক সোনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুর্গাপুরের দুর্গাপুজোয় অগ্রণীর নাম একই বন্ধণীতে পড়ে। আমাদের ছোটবলা থেকেই অগ্রণীর পুজো দেখেই মন ভরে যেতো। বাইরে গেলে মানুষকে অগ্রণী ক্লাবের কাছাকাছি থাকি বললেই সকলে বলে উঠতো- ‘আচ্ছা সেই দারুন পুজোটা?’ – এটাই আমাদের পাওনা”।
অগ্রণী,নবারুণের ভিড় মার্কনী ছুঁয়ে চতুরঙ্গ,উর্বশীতে
RELATED ARTICLES