নিজস্ব প্রতিনিধি বাঁকুড়া: ‘ক্যান্সার’ নামটা শুনলেই আঁতকে উঠে মানুষ। যার মধ্যে জরায়ু মুখের ক্যান্সার সারা বিশ্বের নারীদের কাছে একটি প্রাণঘাতী নাম। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ উদ্যোগে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালনায় দুদিনের জরায়ু মুখ ক্যান্সার নির্ণয় শিবিরের (CERVICAL CANCER SCREENING CAMP) আয়োজন করা হল বাঁকুড়ায়। এদিন বাঁকুড়ার ধর্মশালায় CNCI কলকাতার সহযোগিতায় এক দল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতিততে সারভাইক্যাল ক্যান্সার স্ক্রীনিং টেস্ট করা হয় এদিন। বাঁকুড়া শহর সহ গ্রামাঞ্চলের প্রচুর মহিলা এদিন ভীড় জমান ক্যাম্পে। প্রাক ক্যান্সার পর্যায়ে রোগটিকে চিহ্নিত করা গেলে এই ক্যন্সার সম্পুর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেই দাবী উপস্থিত চিকিৎসকদের। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ উদ্যোগে, বাঁকুড়া প্রতিধ্বনি সহচরী ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ও বাঁকুড়া ধর্মশালা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের যৌথ সহযোগিতায় দুই দিনের জরায়ু মুখ ক্যান্সার নির্ণয় শিবিরের (CERVICAL CANCER SCREENING CAMP) আয়োজন করা হয় বাঁকুড়া নুতনগঞ্জ ধর্মশালায়। ক্যান্সার নামটা শুনলেই আঁতকে উঠে মানুষ। মানব দেহের যে কোনো অংশে যে কোনো সময় ক্যান্সার হতে পারে। জরায়ু মুখের ক্যান্সার সারা বিশ্বের নারীদের কাছে একটি প্রাণঘাতী নাম। আমাদের দেশে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় জরায়ু মুখের ক্যন্সার। এই ক্যন্সার সম্পুর্ণভাবে প্রতিরোধ করা যায় সম্ভব। এই ক্যান্সার হওয়ার প্রায় ১০ বছর আগে থেকে জরায়ুর মুখের চারপাশে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। একে প্রাক ক্যান্সার পর্যায় বলা হয়। এই পর্যায়ে রোগটিকে চিহ্নিত করা গেলে এই রোগে অতি সহজ চিকিৎসার দ্বারা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করা না গেলে, এই রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। একটু সচেতনতা নিজেদের জীবনকে, এই মারণ ব্যাধিক হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। দেখা যাক জরায়ু মুখের ক্যান্সার আসলে কী ? বিবাহিত জীবন শুরু হওয়ার পর জরায়ু মুখে এক ধরণের ভাইরাস (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) এর সংক্রমণের ফলে এই ক্যান্সার হয় ।সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের বিশেষ কোনো লক্ষণ থাকে না। যেহেতু নারীরা তাদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বুঝতে পারেন না বা সচেতনতার অভাবে গুরুত্ব দেন না – ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা তাদের একটা জ্বালা যন্ত্রণাহীন ৫ মিনিটের পরীক্ষার (সারভাইক্যাল ক্যান্সার স্ক্রীনিং টেস্ট) পরামর্শ দিচ্ছেন কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (CNCI) এর বিশেষত্ব চিকিৎসকরা। নিয়মিত এই পরীক্ষার সাহায্যে প্রাক ক্যান্সার পর্যায়ে রোগ নির্ণয় সম্ভব এবং ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিষেধক টীকার মাধ্যমে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাঁকুড়ায় দু দিনের শিবিরে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থা করা হয়েছে । সেখানে শুধু প্রাক ক্যান্সার রোগ নির্ণয় এবং তার চিকিৎসা নয়।সাথে রক্তে শর্করা (ব্লাড সুগার) এবং রক্তচাপ (ব্লাড প্রেশার) এর পরীক্ষাও করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত চিকিৎসাও করা হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সুতরাং ক্যান্সার নিয়ে আর ভয় নয়। আজই আসুন আপনার এলাকার নিকটবর্তী সাব-সেন্টারে এবং সেন্টারের আশা অথবা এ এন এম দিদির সাথে যোগাযোগ করুন এবং পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিন্ত হন যে ভবিষ্যতে আপনার জরায়ুর মুখের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক সমস্ত মহিলাদের শারীরিক সমস্যা না থাকলেও, সুস্থ থাকার জন্য এই পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছে বাঁকুড়া প্রতিধ্বনি সহচরী ওয়েলফেয়ার সোসাইটি র সভাপতি জয়ীত্রা ব্যানার্জী। এই বিষয়ে শিবির করার চিন্তা তারা দু’বছর ধরে করছেন। তারা সাধারণত যেসব এলাকার মানুষদের নিয়ে কাজ করেন অর্থাৎ অত্যন্ত দুস্থ গরিব বস্তিবাসী মহিলাদের মধ্যে, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি রয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। আগামী দিনে আরো বড় কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ অমিতাভ চট্টরাজের দাবী মহিলা সদস্যদের উদ্যোগে বিনামূল্যে একটা শিবির, যার ফলে অনেক গরীব দুঃস্থ মহিলারা সতর্ক হবেন এবং আক্রান্ত হলে সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও পাবেন এটা অত্যন্ত একটু সমাজসেবী উদ্যোগ।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার নির্ণয় শিবির বাঁকুড়ায়
RELATED ARTICLES