জয় লাহা,দুর্গাপুর, ২৩ অক্টোবরঃ পুজোর ক’টা দিন একঘেয়ামি বাড়ির খাবার। মন মজেছে মেলার খাবারে। ছুটির দিনে তাই মেলার দোকানে গরমাগরম চিকেন ললিপপ,বিরিয়ানি। মনমাতানো গন্ধ, প্রাণকাড়া স্বাদ। বাড়িসুদ্ধ সকলে খুশ! রসনা না হয় তৃপ্ত হল। কিন্তু স্বাস্থ্যের অবস্থা কি হয়? আর সেটা খতিয়ে ভাবলে খুশির আমেজ উধাও হতে পারে উৎসব প্রিয় বাঙালির। কারণ ল্যাব-রিপোর্ট বলছে, বহু ক্ষেত্রে জিলাপি, চিকেন ললিপপ ও বিরিয়ানিতে মেশানো হচ্ছে ‘মেটানিল ইয়েলো’ নামের এক রং। ওই রাসায়নিক রং মেশানো খাবার নিয়মিত খেলে মানবদেহে বাসা বাঁধতে পারে ক্যান্সারের মত মারণ রোগের। আর তাই উৎসবপ্রিয় বাঙালির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসরে নেমেছে খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ। পঞ্চমীর দিন থেকে দুর্গাপুর শহরের ভিড়িঙি, চতুরঙ্গ, মার্কনি, ফুলঝোড় বিভিন্ন মেলায় অভিযান শুরু করেছে দুর্গাপুর খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা। একই সঙ্গে মেলায় বসানো হয়েছে খাদ্য সুরক্ষার নবিকরনের জন্য বিশেষ স্টল। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের লক্ষ্যে খাদ্য সুরক্ষার নতুন আইন ঘোষিত হয় ২০০৬-এ। নতুন আইন ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্ট। খাবারের জিনিস হোক বা অন্য কিছু, ভেজালের সমস্যা রয়েছে সর্বত্রই। নানা সময়েই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উদ্ধার হওয়ার ঘটনা খবরে জায়গা পায়। ফলে গৃহস্থদের চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। শস্যদানা থেকে রান্নার মশলা। নানা জায়গায় ভেজাল থাকার খবরও মেলে। যেমন ধরা যাক হলুদ গুঁড়ো। নিত্যদিন রান্নার নানা প্রয়োজনে ব্যবহার হয় এটি। হলুদের ওষধি গুণের জন্য নানা ঘরোয়া টোটকাতেও অঢেল ব্যবহার হয় এই সামগ্রী। কিন্তু যদি হলুদ গুঁড়োয় ভেজাল থাকে? উপকার তো হবেই না। উল্টে স্বাস্থ্যের জন্যও নানা সমস্যা হতে পারে। কীভাবে ভেজাল হয় হলুদ গুঁড়ো? হলুদ রং আনার জন্য নানা ধরনের রং ব্যবহার করা হয় হলুদ গুঁড়োতে। মেটানিল ইয়েলো বা লিড ক্রোমেট ব্যবহার করে অনেকসময় হলুদ গুঁড়োয় রং আনা হয়। অনেকসময় চকের গুঁড়োও মেশানো হয় হলুদ গুঁড়োতে। খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মেটানিল ইয়োল রং মুলত আলকাতরা থেকে তৈরী। এটি দেওয়াল রং করা, নানান আসবাব পত্রে রং করার জন্য ব্যাবহৃত হয়। ছোটো পাউচের এই রং খাবারে মেশানো সম্পুর্ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক দোকানে চিকেন ললিপপ, জিলাপি, পোলাও, বিরায়ানিতে এই রং মেশানো হয়। মেলায় বিভিন্ন খাবারের দোকানে স্টলে লেবেলহীন টমেটো, চিলি সসে এই রং মেশানো হয়। প্রশ্ন, মেটানিল ইয়োলো মেশানো খাবার খাওয়া হলে মানবদেহে কি ক্ষত হতে পারে? পেট খারাপ, ফুড পয়জনিং বা বদহজমের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গুঁড়ো লঙ্কায় লেড ক্রোমেট মেশানো থাকলে রক্তাল্পতা হতে পারে। পটল, মটরে সবুজ একধরনের রাসায়নিক মেশানো হয়। সেটা কিডনির কার্যকারিতায় কোপ পড়ে। মাত্রাতিরিক্ত নিয়মিত মেটানিল ইয়োলো মেশানো খাবার খাওয়া হলে ক্যানসারের মত মারণ রোগের বাসা বাঁধতে পারে। দুর্গাপুর খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক কিরনমনি দেবনাথ জানান,” পঞ্চমীর দিন থেকে দুর্গাপুরের ভিড়িঙি, মার্কনি, চতুরঙ, ফুলঝোড় সহ বিভিন্ন মেলায় খাবারের দোকানে অভিযান চলছে। প্রায় ২০০ খাবারের দোকানে অভিযান করা হয়েছে। ১২ টির মত দোকানে খাবারে মেটানিল ইয়োলো রং পাওয়া গেছে। ওইসব খাবারগুলো নষ্ট করা হয়েছে। মেটানিল ইয়োলো রং নষ্ট করা হয়েছে।”
রঙিন সর্বনাশ! অজান্তে বাসা বাঁধছে মারণ রোগ,পুজোর মেলায় খাবারের দোকানে অভিযানে খাদ্য সুরক্ষা দফতর
RELATED ARTICLES