সার্থক কুমার দে, পাণ্ডবেশ্বর : আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়াকে ৬০ হাজারের কিছু কম ভোটে হারিয়ে জয়ী হলেন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা । মূলত পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি, জামুরিয়ার ভোটে জয় এলো বিহারী বাবুর। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। ২০২২ সালে বাবুল সুপ্রিয় সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগদান করলে আসানসোল কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালকে ৩ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করে সাংসদ হন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। এবার লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগেই এই কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিহারী বাবুর নাম ঘোষণা করে দেন তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে এই কেন্দ্রে ভোজপুরি গায়ক নায়ক পবন সিং কে প্রার্থী করে বিজেপি। কিন্তু পরের দিনই পবন সিং প্রার্থী না হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এরপর জল্পনা তৈরি হয় পদ্মফুল প্রতীকে কে প্রার্থী হবে আসানসোল কেন্দ্রে। শেষ মুহূর্তে বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী করে হয় বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ আলুওলিয়াকে । প্রচারের প্রথম দিন থেকে আলুওয়ালিয়া নিজেকে ভূমিপুত্র বলে প্রচার শুরু করেন। শত্রুঘ্ন সিনহার চেয়ে শারীরিক ভাবে তিনি যে বেশি ফিট সেই কথাটাও প্রচারে তুলে ধরেন আলুওয়ালিয়া। ১৩ মে আসানসোল কেন্দ্রে ভোট হয় নির্বিঘ্নে। এই কেন্দ্রে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে বলে ভোটের পর আভাস পাওয়া যায়। সেই সাথে জল্পনা ছিল শত্রুঘ্ন সিনহা জিতবেন নাকি সাংসদ হিসাবে জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন আলুওয়ালিয়া। মঙ্গলবার গণনা শেষে দেখা যায় ৬০ হাজারের কিছু কম ভোটে আলুওয়ালিয়া কে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। আসানসোল লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতে লিড পায় তৃণমূল প্রার্থী। কুলটিতে ১৫০৫৩ ও আসানসোল দক্ষিণে ১২১৪৭ ভোট বেশি পান আলুওয়ালিয়া। অন্যদিকে পাণ্ডবেশ্বর ৪০,০২৩ বারাবনি ২৫, ৫২৩ ও জামুরিয়া ১১,৮৭১ রানীগঞ্জ ৪,৪৫২ ও আসানসোল উত্তর থেকে ৪৩৬৭ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকেন বিহারীবাবু। পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি, জামুরিয়া এই তিনটি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বির থেকে বেশি ভোট পাওয়ায় জয় নিশ্চিত হয় শত্রুঘ্ন সিনহার বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাদের মতে আরও দুটি ফ্যাক্টর তৃণমূল প্রার্থীকে জিততে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে। প্রথমটি হল “লক্ষীর ভান্ডার” প্রকল্প। প্রকল্পটির কারণে মহিলা ভোটারদের সিংহভাগ ভোট পড়েছে তৃণমূল প্রতীকে। অপরটি হিন্দিভাষী ভোট ফ্যাক্টর। এই কেন্দ্রে হিন্দিভাষী ভোটার রয়েছে যথেষ্ট সংখ্যক। যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিজেপির ভোটার হিসেবে পরিচিত। বিজেপি এবার হিন্দি ভাষি কাউকে প্রার্থী না করায় হিন্দিভাষীদের বড় অংশের ভোট এবার পড়েছে ঘাসফুলে। এইসব ফ্যাক্টার গুলির কারণেই এবার আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয় ও তৃণমূল প্রার্থীর জয় এসেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি, জামুরিয়ার লিড জিতিয়ে দিল শত্রুঘ্ন সিনহাকে
RELATED ARTICLES