বনলতা সেন,টালিগঞ্জঃ মৃত্যুর তেতাল্লিশ বছর পর স্বমহিমায় একটি নতুন ছবির হাত ধরে পর্দায় ফিরছেন মহানায়ক উত্তম কুমার। বাই কার্টসি,অবশ্যই এ.আই. (আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দক্ষ-সফল প্রয়োগ। এই নিয়ে টালিগঞ্জে দারুন শোরগোল। মাতামাতি নেট দুনিয়াতেও। ছবির নাম ‘অতি উত্তম’। পরিচালক সৃজিত মুখার্জী। ছবিটির আরো মজাদার ব্যাপার হল- এই ছবিতে একসাথে অভিনয় করছেন দাদু-নাতি, অর্থাৎ উত্তম কুমার আর গৌরব চট্টোপাধ্যায়। ছবিটি শীতেই রিলিজ করার পরিকল্পনা সৃজিতের। তার আগেসৃজিতেরই একটি হিন্দি ছবির রিলিজ আছে। পরিচালক সেই নিয়ে ব্যস্ত। সৃজিতের দাবি, “এই ‘অতি উত্তম’ ছবিটি অনেক দিক দিয়েই বাংলা ছায়াছবির জগতে মাইলস্টোন হবে। কাহিনী, চিত্র-বিন্যাস তো বটেই,এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রযুক্তির প্রয়োগ। তবে, সবার ওপরে ফ্যাক্টর – বাঙালীর সর্বকালের সেরা ‘গুরু’ একজনই। সেই মহানায়কের ফের বড় পর্দায় নতুন একটি ছবিতে ফিরে আসা”। “এই সলমান,শাহরাখ,দেব,প্রসেনজিতদের জমানায় ফের উত্তম কুমার? ভাবা যায়? আমি নিজে টিকিট কেটে সিনেমা হলে যাবো। গুরুকে আবারও দেখার এমন সুযোগ যে হাতছাড়া করে, সে কি আদৌ বাঙালী?” – উত্তেজনায় ফুটছেন রঙীন মেজাজের জনপ্রিয় নেতা,অভিনেতা মদন মিত্র। মদনের নিজের ছবি ‘ও লাভলী’র রিলিজও সামনেই। উত্তম কুমারকে শেষ দেখা গেছে কোন ছবিতে? – এ প্রশ্ন করলেই সহজতম জবাবটা আসবে-‘ওগো বধূ সুন্দরী’। আসলে, সলিল দত্ত’র এই ছবিটির শ্যুটিং-র সময়ই স্টুডিও ফ্লোরে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হন উত্তম। সেটা ছিল ১৯৮০’র ২৪ জুলাই। তড়িঘড়ি মহানায়ককে উডল্যান্ড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলেও, শেষ রক্ষা হয়নি। সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় উত্তম কুমারের। খসে পড়ে স্বর্ণযুগের বাংলা ছবির সবচেয়ে দামি নক্ষত্র। তার পরের বছর, ১৯৮১ তে মুক্তি পায় ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। বহু হলে চলে টানা এক বছর। ছবিটি অসমাপ্ত রেখেই কিন্তু আচমকাই মারা যান মহানায়ক। তারপর মহানায়কের বডি-ডবল প্রবীর কুমারকে ব্যবহার করে ছবির শেষাংশে, বিশেষতঃ ‘ও ড্যাডি, ও মাম্মি’ গানটির শ্যুটিং করা হয়। ছবির শেষাংশের ডাবিং এ ব্যবহার করা হয় মহানায়কের ছোট ভাই তরুণ কুমারের কন্ঠস্বর। ছবিটি ছিল ব্রিটিশ ছবি ‘মাই ফেয়ার লেডি’র অনুকরণে নির্মিত। তবে, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ কিন্তু উত্তম কুমারের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নয়। বাংলার মহানায়কের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি ছিল হিন্দী। বলিউডের পরিচালক যোগেশ সাক্সেনার এই ছবিটির শ্যুটিং ১৯৭৮ এ শুরু হলেও ছবি মুক্তি পায় ১৯৮৩, মহানায়কের মৃত্যুর পর। ছবিটির নাম ছিল ‘লেট নম্বর: ৫’। এই ছবিতে উত্তম কুমারের সাথে ছিলেন আমজাদ খান,অমল পালেকার ও শ্রীরাম লাগু। নায়িকা বিদ্যা সিনহা। কলকাতার এলিট সিনেমা হলে টানা ১০ সপ্তাহ চললেও, উত্তমকুমারের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির গায়ে সেই ফ্লপের তকমাই জোটে তবে, এই ছবিটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল,এটিই একমাত্র ছবি যার ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক দিয়েছিলেন সলিল চৌধুরী, কিন্তু, ছবিতে একটি গানও ছিল না। এখন, ‘অতি উত্তম’ ছবি প্রসঙ্গে টালিগঞ্জে উন্মাদনার পাশাপাশি দুটি আশংকা আর একটি সম্ভাবনার চর্চাও বেশ তুঙ্গে।আশংকা- ১: এই জেনারেশনের দর্শক উত্তমকুমারকে মেনে নেবে, নাকি সহ্য করতে পারবেনা!
আশংকা-২: এভাবে উত্তম কুমারকে পুনর্জীবিত করলে,এখনকার নায়কদের আর কেউ পুঁছবে?
সম্ভাবনাঃ সৃজিত যে ঝুঁকিটা নিয়েছেন, তা চূড়ান্ত সফল হলে,ভবিষ্যতে কি তবে
ফের ‘উত্তম-সুচিত্রা’ জুটির দুয়ার খুলবে? নতুন নতুন কাহিনী নিয়ে,পর্দায় স্বর্গলোক থেকে ফিরে আসবেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন? ‘অতি উত্তম’ ছবির মুখ্য চরিত্র অনিন্দ্য সেনগুপ্ত একজন উত্তম কুমার গবেষক আর তাকে গবেষণায় সাহায্য করছেন উত্তমের নাতি,গৌরব চট্টোপাধ্যায়। এই হল মূল কাহিনী আর তারই মাঝে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা,পুরনো ছবির অব্যবহৃত রিল, স্টক ফুটেজ ব্যবহার করে, অন্য ভূমিকায় পর্দাতে উত্তমকে ফিরিয়ে আনা।